সিন্টু রঞ্জন চন্দ
সিলেটে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক হযরত আলী হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির মৃত্যুদÐের (ফাঁসি) আদেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ের পাশাপাশি সকল আসামীকে ৩০২ ধারায় ১০ হাজার ও ৩৭৯ ধারায় ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক শায়লা শারমিন চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. কবির হোসেন।
মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন- সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার গোছহাট গ্রামের রওশন আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩১), একই জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ (বর্তমানে শান্তিগঞ্জ) থানার তাইকাপন গ্রামের মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে সুমন আহমদ (১৯), একই থানার বুুরুমপুর গ্রামের মো. ফজিল বারীর ছেলে শিপু মিয়া (১৯), একই এলাকার হাজী মাসুক মিয়ার ছেলে জাকারিয়া উরফে মুন্না (২০) ও হরমুজ আলীর ছেলে মো. রুহুল আমিন (২০)। রায় ঘোষনার সময় দÐপ্রাপ্ত সকল আসামী পলাতক ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের মঙ্গলকাটা বাজারের জাহাঙ্গীর নগর এলাকার সাইদ মিয়ার ছেলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক হযরত আলী (৩৫) সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমা আলমপুর এলাকায় খালেদ মিয়ার কলোনিতে ভাড়া থেকে নুরুল ইসলামের (সিলেট-থ-১২- ৩১৩৫) নং সিএনজি অটোরিকশাটি ভাড়ায় চালিয়ে আসছিলেন। ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় হযরত আলী অটোরিকশা নিয়ে বের হন। ওইদিন রাত ৮ টার দিকে দক্ষিণ সুরমা কদমতলী সিএনজি স্ট্যান্ড হতে শহিদুল ইসলাম, সুনম আহমদ, শিপু মিয়া, জাকারিয়া উরফে মুন্না ও রুহুল আমিন বিয়ানীবাজার যাওয়ার কথা বলে সিএনজি অটোরিকশা চালক হযরত আলীকে ভাড়া নেন। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে শিকপুর-বিয়ানীবাজার রোডের চুনু মিয়ার ডোবার দক্ষিণ পাশে রাস্তার উপর পৌঁছামাত্র অটোরিকশার ৫ যাত্রী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার কথা বলে অটোরিকশাটি থামানো হয়। এ সময় ৫ যাত্রী মিলে ধারালো ছুরা দিয়ে চালক হযরত আলীর পেটে, পিঠে, কাধে, কোমরে ও হাতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পার্শ্ববর্তী ডোবায় ফেলে দিয়ে (সিলেট-থ-১২- ৩১৩৫) নং সিএনজি অটোরিকশাটি নিয়ে বিয়ানীবাজারের দিকে পালিয়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন রাত সোয়া ১১ টার দিকে ছিনিয়ে নেওয়া সিএনজি অটোরিকশাসহ ৫ ছিনতাইকারীকে হাতে-নাতে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় চালক হযরত আলীকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নিয়ে গেলে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ওইদিন রাত পৌনে ২ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হযরত আলী মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় উল্লেখিত ৫ আসামীকে অভিযুক্ত করে নিহত চালক হযরত আলীর ছোট ভাই শুকুর আলী বাদি হয়ে বিয়ানীবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১৫ (১৮-০৮-২০১৪)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৪ নভেম্বর বিয়ানীবাজার থানার এসআই মোহাম্মদ বাছেদ মিয়া ৫ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং- ১৫৭) দাখিল করেন এবং ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন।
দীর্ঘ শুনানী ও ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) আদালত আসামী শহিদুল ইসলাম, সুমন আহমদ, শিপু মিয়া, জাকারিয়া উরফে মুন্না ও রুহুল আমিনকে ৩০২/৩৭৯/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদেরকে মৃত্যুদÐ (ফাঁসি) রায় ঘোষনা করেন এবং ৩০২ ধারায় প্রত্যেক আসামীকে ১০ হাজার টাকা ও ৩৭৯ ধারায় আরো ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার দÐাদেশ প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এপিপি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস ছাত্তার, এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট দিনা ইয়াছমিন ও বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট জায়েদা বেগম এবং আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হাসান মামলাটি পরিচালনা করেন।
রায় ঘোষনার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই মো. শুকুর আলী বলেন- দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ চলছিলো এ মামলাটি। আজ সকল আসামীর ফাঁসি হওয়ায় রায়ের প্রতি অনেক সস্তুষ্ট। সকল আসামীর ফাঁসি যেন দ্রæত কার্যকর হয় এই দাবী জানাচ্ছি।
রাষ্ট্রপক্ষের এপিপি অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস ছাত্তার বলেন- সিএনজি অটোরিকশা চালক হযরত আলী হত্যা মামলায় ৫ আসামীর মৃত্যুদÐ হওয়ায় বাদী ন্যায়বিচার পাওয়া রাষ্ট্রপক্ষ সস্তুষ্ট হয়েছে। মাননীয় বিজ্ঞ বিচারক একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন।