দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। প্রতিদিনই বন্দুকযুদ্ধে মাদক কারবারিদের নিহতের খবরও আসছে। কিন্তু মাদকাসক্তের সংখ্যা কমছে না। নিয়ন্ত্রণও করা যাচ্ছে না। দেশের তরুণসমাজের একটি বড় অংশ মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বা পড়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান চালানো হলেও মাদকাসক্ত শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। ফলে সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশায় ঢুকে পড়ছে মাদকাসক্তরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায়, চাকরিতে ঢোকার পর অনেকে কুসংসর্গে পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদক ঢুকে পড়েছে। কিন্তু দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকাসক্ত শনাক্তের কোনো ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি হচ্ছে দেশের সড়ক-মহাসড়ক। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। একটি জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, যানবাহনের চালকদের একটি বড় অংশ মাদকাসক্ত। অনেকেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে মুক্ত হওয়া যাচ্ছে না। সব ক্ষেত্রেই যদি মাদকাসক্ত শনাক্তের ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। দেশে গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ কার্যকর হয়েছে। এই আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, মাদকাসক্ত ব্যক্তি শনাক্ত করতে প্রয়োজনে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ডোপ টেস্ট করা যাবে। ডোপ টেস্ট পজিটিভ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা আছে। কিন্তু মূল বাধা রয়ে গেছে আইনেই। মাদক আইনে বলা কয়েকটি বিধির খসড়া তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও ডোপ টেস্টের বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। আবার নেই প্রয়োজনীয় লোকবলসহ যন্ত্রপাতি ও কিটস। এসব চাহিদা পূরণ করা গেলে ডোপ টেস্ট করা সহজ হবে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশ, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানসহ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। ডোপ টেস্টের এক সপ্তাহ আগে থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাদক সেবন থেকে বিরত থেকে উতরে গেলেও পরবর্তী সময়ে পরীক্ষায় তার শরীরে মাদকের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে মাদকাসক্তদের জন্য চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারলে মাদকের কারবার বেশির ভাগ কমে যাবে। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর সব প্রতিষ্ঠানে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা নেওয়া হলে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা দরকার। সেই সঙ্গে এখন যারা যানবাহনের চালক হিসেবে নিয়োজিত তাদের ডোপ টেস্ট করে আইনগত ব্যবস্থা নিলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।
দেশকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে সব ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।