মো: নিজাম নুর জামালগঞ্জ থেকে :
অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়নের প্রকল্পই এলাকা দিয়ে নৌকা চলাচল করছে, অথচ কাগজে কলমে বর্তমানে কাজ চলমান দেখানো হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু দুইটি প্রকল্প হরিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট প্রকল্পটি থাকলে, প্রকল্প চেয়ারম্যান নিজেই কোন কাজ না করার কথা স্বীকার করেছেন, আর মদনাকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠ ভরাট প্রকল্পে কয়েক হাজার টাকা বালু ফেলা হয়েছে নামে মাত্র। আবার অন্য আরেক প্রকল্প চেয়ারম্যান মনগড়া ভাবে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেবার কথাও বলেছেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মুখে ভিন্ন সুর থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কঠোর ভাবে জানিয়েছে কাজ ছাড়া কোন বিল ছাড় দেওয়া হবে না। জামালগঞ্জের বেহেলীর ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প, বেশীর ভাগ প্রকল্পই পানির নীচে, হালির হাওরের ফসলহানীর পর এবার কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। ফসলহানীর ঘটনায় বেহেলীর চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট পিআইসিদের নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগও রয়েছে। অতিদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকাও তুলে নিজেদের মধ্যে অতীতের মত ভাগবাটোয়ারা করার চিন্তা করছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্প চেয়ারম্যানরা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ পানির নীচে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করে তছরফ করার চেষ্টা চালাচ্ছে, অবশ্য উপজেলা প্রশাসন কাজ ছাড়া কোন বিল ছাড় না দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। গেল ১৩ এপ্্িরল সুনামগঞ্জের প্রথম দাপেই হালির হাওরটির বাঁধ ভেঙ্গে ফসিলে তলিয়ে যায়, আর অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর ২য় পর্যায়ের অনুমোদন হয় ফসল ডুবির ১৪ দিন পর ২৭ শে এপ্রিল।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় ২য় পর্যায়ের বরাদ্দে বেহেলী ইউনিয়নের ৫টি কর্মসৃজন প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে ১৫ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৯৩ জন সুবিধাভোগীর মাধ্যমে। যে সময়ে হাওরের মধ্যে পানি আর অথৈ পানি ঠিক সেই সময়ে বেহেলী ইউনিয়নের ২য় পর্যায়ের প্রকল্প গুলি অনুমোদন হয় ২৭শে এপ্্িরল। সরকারীবিধি মোতাবেক প্রকল্প অনুমোদনের পর কাজ শুরু করার কথা থাকলেও অধিকাংশ প্রকল্পই পানির নীচে।
সরেজমিনে গত সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, বেহেলী ইউনিয়নের ইনাতনগর হালির হাওরের গাছের তলে মাঠির রাস্তা নির্মাণে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা অথচ এই জায়গার উপর দিয়ে বড় বড় নৌকা চলাচল করছে, প্রকল্প এলাকাতে ১০ থেকে ১৫ ফুট পানি হবে, হিজলা গ্রামের চড়ের মাঠির রাস্তা নির্মানে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ অথচ হিজলা গ্রামের সামনে ১৩ ই এপ্রিলের পর থেকে বড় বড় ভলগেট চলাচল করছে, প্রকল্প এলাকাতে বড় বড় ঢেউ আর ঢেউ। মদনাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট প্রকল্পে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দের কাজে নামে মাত্র কয়েকশ ফুট বালি ফেলা হয়েছে। হরিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট প্রকল্পে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দে কোন কাজ না করার কথা প্রকল্প চেয়ারম্যান নিজেই স্বীকার করেছেন। শিবপুর পূর্ব পাড়া জামে মসজিদ হতে মনাছ আলীর বাড়ীর রাস্তা ও রাধানগর ফুটবল খেলার মাঠ হতে বিলপাড় পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে ৫ লক্ষ ১২ হাজার টাকার প্রকল্পে জায়গার উপর দিয়ে নৌকা চলাচল করছে কোন কাজই হয়নি, প্রকল্প চেয়ারম্যানের দাবী।
হরিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের প্রকল্প চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, আমি ঠিকই প্রকল্প চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান সাবই সব কিছু দেখেন, এই প্রকল্পে কোন কাজ হয়নি আজ পর্যন্ত। রাধানগর ফুটবল খেলার মাঠ হতে বিলপার পর্যন্ত রাস্তার প্রকল্পের চেয়ারম্যান খোকন মিয়া বলেন, আমার প্রকল্পে পানি থাকায়, তা আমরা পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করেছি। মদনাকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের প্রকল্প চেয়ারম্যান মনু মিয়া বলেন, মাটি ভরাট করিনী,স্কুলে মাঠে কিছু বালি ফেলা হয়েছে। ইনাতনগর হালির হাওরের গাছের তলের প্রকল্প চেয়ারম্যান আ: হাসিম ও হিজলার প্রকল্প চেয়ারম্যান মশিউর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া প্রকল্প এলাকায় পানির বিষয়ে বলেন, আপনারা যা মন চাই লিখেন এই বিষয় নিয়ে আমাকে আর কল দিবেন না ভাই !
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসূন কুমার চক্রবর্তী বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্প সহ অন্যান্য প্রকল্প গুলোর তদারকির জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যে পরিমাণে কাজ হবে তার বাহিরে কোন বিল ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প চেয়ারম্যানদেরকে পত্র পাঠানো হয়েছে।