সিয়াম সাধনার মাস

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাহে রমজানের আজ ১৮তম দিবস। মাহে রমজান আত্মগঠন ও আত্মপরিচয় অনুধাবনের মাস। দিনব্যাপী উপবাসব্রত পালনের মধ্য দিয়ে ধনী-গরিব সকলের মধ্যে সেই অভিন্ন চেতনা সৃষ্টি রোজা পালনের অন্যতম লক্ষ্য । কঠোর শ্রমনির্ভর ইবাদত অনুশীলনের মাধ্যমে এ মাসে আখিরাতের সঞ্চয় করতে হয়। একইভাবে দুনিয়াবী সফলতা অর্জনের জন্যও হালাল পথে শ্রম দানের কোন বিকল্প নেই। জীবিকা অর্জনের অন্যতম উপায় শ্রম। এ কারণেই মহানবী (স.) শ্রম বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হযরত আনাস (রা.) বলেন, একবার এক আনসার সাহাবী নবী করীম (স.) এঁর নিকট এসে কিছু চাইলেন। তখন তিনি তাকে বললেন, তোমার ঘরে কি কোন কিছু নেই? উত্তরে সাহাবী বললেন, হ্যাঁ, আছে। একখানা কম্বল; যার একাংশ আমি পরিধান করি অপর অংশ শয্যারূপে ব্যবহার করি। তাছাড়া পানি পান করার একটি পানপাত্রও। রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, তাহলে এ দুটো জিনিসই আমার নিকট নিয়ে এসো। সাহাবী তার দু’টা জিনিস আনলে নবী (স.) তা নিজ হাতে নিয়ে উপস্থিত লোকদের মধ্যে এর নিলাম ডাকলেন এবং বললেন, এগুলো খরিদ করবে কে? এক সাহাবী বললেন, এগুলো এক দিরহাম দিয়ে নিতে রাজি আছি। রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, এক দিরহামের চেয়ে অধিক দিয়ে নেয়ার জন্য কে রাজি? এ কথাটি তিনি দুবার কি তিনবার বললেন। তখন এক সাহাবী বললেন, দুই দিরহাম দিয়ে নিতে আমি রাজি আছি। মহানবী (স.) তাকে বস্তু দুটি দিয়ে তার থেকে দুই দিরহাম গ্রহণ করলেন । তারপর তিনি দিরহাম দুটি আনসার সাহাবীকে দিয়ে বললেন, এর একটি দিয়ে তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য খাদ্য ক্রয় করে তাদেরকে দিয়ে এসো। আর অপরটি দিয়ে একটি কুড়াল খরিদ করে আমার কাছে নিয়ে এসো।
সাহাবী কুড়াল ক্রয় করে এনে রাসূলুল্লাহ (স.) এর নিকট দিলে তিনি নিজ হাতে এতে হাতল লাগিয়ে দিলেন এবং বললেন, জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে তা বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে থাক। আর আমি যেন তোমাকে পনেরো দিনের মধ্যে না দেখি।
নবী (স.) এর নির্দেশে সাহাবী জঙ্গলে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করতে লাগলেন। তারপর দশ দিরহাম উপার্জন করে তিনি রাসূলুল্লাহ (স.) এঁর কাছে ফিরে এলেন। এর কিছু দিয়ে কাপড় খরিদ করলেন এবং বাকি দিরহাম দিয়ে খাদ্যদ্রব্য খরিদ করলেন। রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, অপরের নিকট ভিক্ষার দরুন কিয়ামতের দিনে তোমার চেহারায় দাগ নিয়ে আসা অপেক্ষা জীবিকার্জনের এটা অনেক বেশি উত্তম পন্থা।’ (মিশকাত,পৃ ১৬৩)।
এখানে লক্ষ্য করার ব্যাপার হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ (স.) ওই সাহাবীকে ভিক্ষার পরিবর্তে পরিশ্রম করে কাজ করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তদুপরি তিনি শ্রম বিনিয়োগের কার্যকরী পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এমনিভাবে সমাজের বেকার সমস্যা সমাধানেও রাসূলুল্লাহ (স.) বাস্তব ভূমিকা রেখেছেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল কাজে ও হালাল পথে শ্রম বিনিয়োগ কিছুমাত্রও লজ্জার ব্যাপার নয়। বরং এ হচ্ছে নবীগণের (আ.) সুন্নাত। প্রত্যেক নবীই দৈহিক পরিশ্রম করে উপার্জন করেছেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। মুসতাদরাকে হাকিম গ্রন্থে হযরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত দাউদ (আ.) বর্ম তৈরি করতেন। হযরত আদম (আ.) কৃষিকাজ করতেন। হযরত নূহ (আ.) কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। হযরত ইদরীস (আ.) সেলাই কাজ করতেন এবং হযরত মূসা (আ.) রাখালের কাজ করতেন। (ফতহুল বারী ৪র্থ খ-,৩০৬)। উপরোক্ত হাদিসের প্রেক্ষিতে শ্রমের গুরুত্ব ও মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। শ্রম যদি নিচু ধরনের বিষয় হতো, তাহলে নবীগণের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা এ জাতীয় কাজ সম্পাদন করাতেন না। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা আমাদের মনে সে নিরহঙ্কার শ্রমনির্ভর ইহ-পারলৌকিক জীবন গড়ার প্রত্যয় সৃষ্টি হোক, এ কামনা আজকে ।