সাইবার জগতে অপরাধ সংঘটনের বিষয়টি আমাদের দেশে নতুন সমস্যা। তবে এতটা নতুন নয় যে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বা অপরাধ দমনবিষয়ক সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে আনপড় অবস্থায় রয়ে গেছে। ই-মেইল বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা, ভুয়া অ্যাকাউন্ট বা আইডি খোলা এবং এসবের মাধ্যমে প্রতারণা করা, হুমকি দেওয়া, মানহানি করা, প্ররোচিত করে ফাঁসানো প্রভৃতি অপরাধ সংঘটিত করা হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের প্রক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন সরকারপ্রধানসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, আইনপ্রণেতা, রাজনীতিক, নাট্যনির্মাতা, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী, খেলোয়াড়, নামকরা পেশাজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, ঘরনিপ্রায় সব ধরনের মানুষ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে ৩৬টি ভুয়া ফেসবুক আইডি শনাক্ত করেছে র্যাব। শুধু সরকার নয়, বিরোধীদলীয় নেতাদের নামেও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে প্রতারণার ফাঁদ পাতার উদ্দেশ্যে। বলা যেতে পারে, সাইবার অপরাধের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এ ব্যাপারে যাঁরা তদন্ত করেন তাঁদের ভাষ্য, প্রতারণা করা বা প্রলোভন দেখানোর জন্য বা অশোভন কাজের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য যেসব ফেসবুক আইডি তথা অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয় সেসবের বেশির ভাগে প্রদত্ত তথ্য ভুয়া, অর্থাৎ এসব আইডি ভুয়া। অনেক সময় এসবের পেছনে সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র থাকে। বেশির ভাগ ভুয়া আইডিতে সুন্দরী নারী বা তারকার ছবি অথবা প্রায় নির্বসনা ছবি দেওয়া থাকে। ব্যক্তিনামের আইডিও থাকে, যেগুলো ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করা হয়। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ছয়টি ও তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে একটি আইডি খুলেছেন এক ব্যক্তি। কাজের জন্য তদবিরের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। স্পিকারসহ বিভিন্ন নেতার নামেও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। তাঁকে চার সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কোনো কোনো আইডি থেকে সরাসরি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ইমো অ্যাপে ‘বিশেষ কথা’ বলার জন্য বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়। এর পরিমাণ কখনো হাজারও হতে পারে। এ আইডিগুলোতে নির্বসনা বা প্রায় নির্বসনা ছবি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ কাজ যৌন হয়রানি বা উসকানি ও প্রতারণার অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে নানা ধরনের হুমকিও দেওয়া হয়ে থাকে। খ্যাতিমান বা ক্ষমতাবান মানুষ সুরক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা সহজেই করতে পারেন; কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে তা সহজ নয় মোটেও। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ দমনকারী বিভিন্ন সংস্থার বাস্তবতা উপযোগী সক্ষমতা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছেনি। এসব সমস্যা নিয়ে কাজ করতে পারে এমন সমন্বিত ইউনিট পুলিশের নেই।
দেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি ফেসবুক গ্রাহক রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা ও স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। তাই সাইবার অপরাধের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে। এসবও জননিরাপত্তা এবং পারিবারিক শান্তি বিঘ্নকারী সমস্যা। তথ্য ও প্রক্রিয়ার যথাযথ সমন্বয় করে ‘সাইবার টহলদারি’ বাড়ানো খুব জরুরি। সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা বাড়ানোর আবশ্যকতাও রয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। এসবের জন্য দক্ষ ও যোগ্য নিরাপত্তা ইউনিট দরকার।