বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন : চলতি দশকে কমবে বিশ্ব অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি

7

কাজিরবাজার ডেস্ক

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতির অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পেছনে যেসব বিষয় অবদান রেখেছে, ধীরে ধীরে কমে আসছে সেগুলোর তেজ। যার ফলে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতির ‘গতিসীমা’ নেমে আসবে গত তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে, চলতি দশকের গড় প্রবৃদ্ধি হবে এই শতকের প্রথম তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ‘দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ব্যর্থতা: গতিধারা, প্রত্যাশা ও নীতি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি গতকাল সোমবার প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতি বাড়ানো ছাড়াই সর্বোচ্চ যে হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায়, তাকেই অর্থনীতির ‘গতিসীমা’ বলা হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক কর্মকাÐ এবং উৎপাদন বাড়লে সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে কিছুটা মূল্যস্ফীতি হওয়া স্বাভাবিক। তবে সেটা যেন দীর্ঘমেয়াদি না হয় এবং উচ্চ পর্যায়ে না যায়, সেটাই লক্ষ্য রাখার বিষয়। মূলত, দীর্ঘমেয়াদে বাড়তি মূল্যস্ফীতি ছাড়াই প্রবৃদ্ধি অর্জনের সক্ষমতার হারই অর্থনীতির ‘গতিসীমা’।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ থেকে ২০৩০ সালের বিশ্ব অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। প্রবৃদ্ধির এই হার হবে চলতি শতকের প্রথম দশকের এক-তৃতীয়াংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি আরও বেশি কমতে পারে। এ ক্ষেত্রে কমে যাওয়ার হারগুলো বিশ্বমন্দায় প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার হারের চেয়েও বেশি। কভিড-১৯ ও যুদ্ধসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছাড়াও সাম্প্রতিক বিভিন্ন দেশের ব্যাংক খাতের সংকট এবং মন্দাবস্থা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন অর্থনীতি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাজেট ঘাটতি বেশি ছিল। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ঢাকা শহরের চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবারের পেছনেই খরচ হয় ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। তবে মাছ-মাংস না খেলে এই খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকায়। এই হিসাব গত ফেব্রæয়ারি মাসের। এক বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি খাবার খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ। তিনি বলেন, গরুর মাংস, চিনি, সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক বেশি। সবসময় বিশ্ববাজারকে দোষারোপ করা যায় না। কর কমিয়ে স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে। বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে।
মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেল, মরিচ, হলুদ, আদা, রসুনসহ ১৭টি নিত্যপণ্যের প্রতিদিনের বাজারদর এবং একজন মানুষ গড়ে কী পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে, এর ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করা হয়েছে। সিপিডি বলছে, একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারকে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খাবারের পেছনে খরচ করতে হয়। দেশের অর্থনৈতিক দুঃসময়ের কারণ হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধকে আর অজুহাত করার সুযোগ নেই জানিয়ে ফাহমিদা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধকে সবসময় একটা কারণ হিসেবে বলে এসেছি। সেটা আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়া কিংবা অর্থনীতির ওপর বিভিন্ন চাপের ক্ষেত্রে বলেছি। সেটাকে আর একমাত্র অজুহাত বললে হবে না। অর্থনীতির ভেতরে থাকা দুর্বলতা ছিল সেগুলো মূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের ফল কিছুটা থাকলেও বাকিটা দেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করছে।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে বাজারব্যবস্থা ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। এখানে কোনো ধরনের ম্যাকানিজম কাজ করছে না। এর মধ্যে বেশি জটিল বিষয় হচ্ছে বড়রা ছোটদের খেয়ে ফেলছে। বাজারের ভেতর ছোট ব্যবসায়ীদের প্রভাব ও অংশগ্রহণ ক্রমেই সীমিত থেকে সীমিততর হচ্ছে। বড়দের প্রভাব-প্রতিপত্তি অনাকাক্সিক্ষতভাবে বাড়ছে। এর ফলে বিশ্ববাজারে মূল্য কমে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের বাজারে অনেক পণ্যের দাম লাগামহীন থাকছে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অর্থনীতিতে ঝড় ও ঝুঁকি আগের তুলনায় বেড়েছে। ঝড়ের আকার ও গভীরতা বেড়েছে। যে ঝড়কে আমরা সামাষ্টিক কিংবা ব্যষ্টিক পর্যায়ের ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করতাম, সেটি এখন ব্যক্তি পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকার এই প্রক্রিয়া থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে আইএমএফের লোন কিংবা শর্তাদির ওপর নির্ভরশীল থাকতে চাইছে। শুধু আইএমএফের শর্ত ও সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ যথেষ্ট হবে না। আইএমএফের শর্তের বাইরেও বিবিধ রকমের কার্যক্রম নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা উচিত। পারলে এই ঈদেই বেতনভাতা বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। তাই সব খাতের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো উচিত। এ অবস্থায় আগামী বাজেটে করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ন্যূনতম করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।