নির্বাচনী পরিবেশ সুন্দর হোক

65

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই নানা ধরনের সংশয়-শঙ্কা দানা বাঁধছে। বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনকেন্দ্রিক গোলযোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আট জেলায় আওয়ামী লীগের ক্যাম্পে আগুন দেওয়া হয়েছে। ঘটেছে ভাঙচুরের ঘটনা। চার জেলা প্রশাসককে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দু বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে এসব ঘটনা বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে।
এমনিতেই নির্বাচনের সময় সর্বত্র উত্তাপ-উত্তেজনা বিরাজ করে। কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে মুখোমুখি হয়ে পড়লে অনেক সময় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কিন্তু যখন তা প্রাণঘাতী সংঘর্ষে রূপ নেয় তখন আশঙ্কা বাড়ে। দেশের মানুষ পাঁচ বছর পর জাতীয় সংসদে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করে পাঠাবে। ভোটারদের নিজেদেরও পছন্দ-অপছন্দ আছে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত, বিশেষ করে তা প্রাণঘাতী সংঘর্ষে রূপ নিলে। গত শুক্রবার ভোরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি গ্রামে হিন্দু বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটতে দেখেছি আমরা। অসাম্প্রদায়িক আদর্শের বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে চার জেলা প্রশাসককে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি। নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। চিঠিতে শুধু জেলা প্রশাসকদের নয়, তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনাও খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অনেক আগে থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। একটি সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী নাশকতা সৃষ্টি করে এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করবে—এমন আশঙ্কার কথা পর্যবেক্ষক মহল থেকে বারবার উচ্চারিত হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে পেশিশক্তি ও জঙ্গিগোষ্ঠী নতুন করে আত্মপ্রকাশ করতে পারে এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জেলা প্রশাসকদের হুমকি দিয়ে চিঠি দেওয়া, রাতের অন্ধকারে হিন্দু বাড়িতে আগুন কিংবা আওয়ামী লীগের ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনাগুলো তাই বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। নির্বাচন যাতে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হতে না পারে তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এবারের নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করছে। কাজেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার দায়িত্ব সবার। এই দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে টহল বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। অর্থবহ নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও গণতন্ত্রকে সংহত করবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কাজেই নির্বাচন কমিশনকে কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সব সংশয় দূর করে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে হবে।