আতিকুর রহমান মাহমুদ ছাতক থেকে :
সুনামগঞ্জে হাওরাঞ্চলের ১১টি উপেজলায় দু’হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি নদীর ৯২৫ কিলোমিটার অংশ খননের উদ্যোগ গ্রহন করেছে সরকার। সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গঠিত কারিগরি টিম সরেজমিনে এসব প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে। ডিজাইন তৈরির জন্য সার্ভে কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে। ডিজাইন অনুমোদন হলে পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প প্রস্তাবনা আকারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণের নির্দেশনা দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদন হলেই কাজের দরপত্র আহবান করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নদী খননের প্রস্তাবিত প্রকল্প গুলোর মধ্যে রয়েছে সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় সুরমা নদী ৫০ কিলোমিটার, চিলাই নদী ২৫ কিলোমিটার, দোয়ারাবাজারের খাসিয়ামারা নদী ১০ কিলোমিটার, ছাতকের জালিয়াছড়া নদী ১৬ কিলোমিটার, বোকা নদী ১৭ কিলোমিটার ও বটেরখাল ১০ কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আবুয়া নদী ২০ কিলোমিটার, তাহিরপুরের বৌলাই নদী ৫৩ কিলোমিটার ও পাটনাই নদী ২০ কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদরের চলতি নদীর ১২ কিলোমিটার, ধর্মপাশার সোমেশ্বরী নদী ৫০ কিলোমিটার, কংশ নদী ২৭ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ সদর, জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশায় সুরমা নদী ৫০ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ সদরের পিয়াইন নদী ৩৮ কিলোমিটার, তাহিরপুরের কেন্দুয়া ও আপার-বৌলাই নদী ১২ কিলোমিটার এবং ১০ কিলোমিটার, ধর্মপাশার গুমাই নদী ২০ কিলোমিটার ও উবাদখালী ১৫ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ সদরের জিরাক নদী ২০ কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুরের ধলাই নদী ২০ কিলোমিটার, তাহিরপুরের পাইকের তলা নদী ৫ কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুরের রূপসা ১০ কিলোমিটার, তাহিরপুরের আহম্মকখালী নদী ১.৫০ কিলোমিটার, তাহিরপুরের আহম্মকখালীর সোনাতলা খাল ১.৫০ কিলোমিটার, দীঘা কাইতনার খাল ৪ কিলোমিটার, তাহিরপুরের মেশিনবাড়ী-বোয়ালমারা খাল ৭ কিলোমিটার, বিশ্বম্ভরপুরের পুটিয়ার খাল ১০ কিলোমিটার, বৌলা-সুদামখালী খাল ১৪ কিলোমিটার, ধর্মপাশার ঘাসি নদী ২০ কিলোমিটার, দিরাইয়ের কালনী নদী ২২ কিলোমিটার, জগন্নাথপুর, দিরাই ও শাল্লায় কুশিয়ারা নদী ৫৩ কিলোমিটার, দিরাই ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মরা সুরমা নদী ৩৪ কিলোমিটার, শাল্লার গুদি নদী ৬ কিলোমিটার, দোয়ারাবাজারের শিলা নদী ১৬ কিলোমিটার, জগন্নাথপুরের বিবিয়ানা ৩৪ কিলোমিটার, দিরাই ও শাল্লার চামতী নদী ৩৩ কিলোমিটার ও পুরাতন সুরমা নদী ২০ কিলোমিটার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ডাউকি ৮ কিলোমিটার, জগন্নাথপুর ও দিরাইয়ের খামারখাল ৩৫ কিলোমিটার, দিরাইয়ে মহাশিং নদী ৪০ কিলোমিটার, জগন্নাথপুরের নলজোর নদী ৩৪ কিলোমিটার, দিরাই উপজেলার হেরা-চাপতী নদী ১৫ কিলোমিটার, চাতল নদী ৭ কিলোমিটার। সুনামগঞ্জের এসব নদী ও হাওরের অভ্যন্তরীণ খাল খননের কাজ দুর্নীতিমুক্তভাবে সম্পন্ন হলেই হাওরবাসীর দুঃখ অনেকটা ঘুচে যাবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পলিমাটি এবং অপরিকল্পিতভাবে নদীশাসনের কারণে খরস্রোতা নদী যৌবন হারিয়ে বিপন্ন করেছে হাওরবাসীকে। হাওরের অভ্যন্তরীণ খাল এবং এক সময়ের খরস্রোতো নদীর উপর এখন হেমন্তে সবজি ও ধানের চাষ করেন কৃষকরা। ভারী বৃষ্টি কিংবা উজানের ঢল সামাল দিতে পারছে না এসব নদ-নদী। নদীর পানিতে হাওর ও জনপদের ক্ষতি করছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রেও মানুষের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিয়েছে। সচেতন মহলের ধারনা, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হলেই এ অঞ্চলের মানুষ অনেকটা উপকৃত হবেন। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া এ ব্যপারে জানান, হাওরবাসীর দুঃখ-দূর্দশা লাঘবে এখানে দু’হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৯শ’২৫ কিলোমিটার নদী খননের জন্য প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। নদী খনন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অকাল বন্যার কবল থেকে সুনামগঞ্জবাসীর ফসল রক্ষাসহ যোগাযোগ ক্ষেত্রে সহজলভ্যতার সৃষ্টি হবে।