একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর। এক মাসেরও কম সময় রয়েছে। এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়ে গেছে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন। অনেক আসনে একই দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। দলগুলোই এক আসনে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছিল। এর পেছনে কৌশলগত কারণ যেমন রয়েছে, তেমনি আছে প্রার্থীদের আধিক্য। জানা গেছে, কোনো কোনো আসনে একটি দলেরই মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিল অর্ধশতাধিক।
এবার আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন প্রায় ১২ হাজার ব্যক্তি। রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়ার মতো অবস্থা! এর পরও থাকছে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সংখ্যা। আর শুধু ইচ্ছার প্রকাশই নয়, কোনো কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করার জন্য এলাকায় রীতিমতো শোডাউন করেছেন। নিজের শক্তি ও ক্ষমতা দেখিয়েছেন। অনেক জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। জাতীয় সংসদের আসন মাত্র ৩০০টি। সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হবেন ৩০০ জন। বলা হয়, সংসদ সদস্যদের প্রধান কাজ জনসেবা করা। সেই জনসেবার জন্য এত বিপুলসংখ্যক ব্যক্তির এমন প্রবল আগ্রহ আর কোনো দেশে দেখা যাবে কি?
যেসব দেশে বেকারত্ব বেশি সেসব দেশে চাকরির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এমন প্রতিযোগিতা দেখা যায়। বাংলাদেশ ও ভারতে এমন খবর প্রায়ই পাওয়া যায় যে একটি চাকরির বিপরীতে কয়েক শ প্রার্থী আবেদন করেছে। কিন্তু জনসেবার জন্য এমন প্রতিযোগিতা খুব কমই দেখা যায়। নাকি এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে? থাকতেও পারে।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, একেকজন সংসদ সদস্যের গড় বার্ষিক আয় কোটি টাকার ওপর। একেকটি সংসদীয় আসনে পাঁচ বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি উন্নয়নকাজ হয় এবং সেগুলোতে এমপিদের প্রভাব বিস্তার ও অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ আছে। এসব কাজ থেকে ১০ শতাংশ বা তারও বেশি ‘কমিশন’ গ্রহণের অভিযোগও কম নয়। আছে মোটা অঙ্কের সম্মানী ভাতা, সরকারি ফ্ল্যাট, শুল্কমুক্ত গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা গ্রহণসহ আয়-উন্নতির নানাবিধ সুযোগ। সুইজারল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস ও সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের (এসডিসি) গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ছয় বছরেরও কম সময়ে একেকজন সংসদ সদস্যের আয় বেড়ে গড়ে ৩২৪ শতাংশ হয়েছে। আর এসব কারণে অনেক সংস্থা বা ব্যক্তি সংসদ সদস্যের পদটিকে ‘অতি লাভজনক’ একটি পদ হিসেবে অভিহিত করেছে।
তিরিশ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই দেশ গণতন্ত্র, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের একটি দৃষ্টান্ত হবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল স্বাধীনতাকামী প্রতিটি মানুষের। রাজনীতিতে স্খলন ও অনৈতিকতার যে অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে, তা থেকে উত্তরণ জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোকে সততা ও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। যেকোনো মূল্যে দেশের রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে হবে।