সুষ্ঠু নির্বাচন সকলের প্রত্যাশা

57

বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল অংশ না নেওয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একপক্ষীয় হয়ে পড়েছিল। ফলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তার মধ্যেই কেটে গেছে পাঁচটি বছর। এরই মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। বিএনপি ও নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দুই দফা সংলাপের পরও নির্বাচনে অংশ নেবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। অথচ দেশের মানুষ পাঁচ বছর ধরেই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখার অপেক্ষায় ছিল। সেই অনিশ্চয়তা অনেকাংশেই কেটে গেছে গত রবিবার অনুষ্ঠিত ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনের পর। সেখানে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, পরিস্থিতি কঠিন হলেও তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাঁরা নির্বাচনের তফসিল এক মাস পেছানোর দাবি। একই সঙ্গে তাঁরা সাত দফা দাবি পূরণেরও আহ্বান জানান। এই বক্তব্যের পর নির্বাচন নিয়ে যে একটা গুমট পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, তা কেটে গেছে। ফলে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে এমন আশা করার একটি যুক্তিসংগত ভিত তৈরি হয়েছে।
অতীতে নির্বাচন নিয়ে দেশে অনেক তোলপাড় হয়েছে। ১৯৯৬ সালে মধ্য ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর বেশির ভাগ বিরোধী দল তা মেনে নেয়নি। তীব্র আন্দোলনের পর দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরও ব্যাপক গোলযোগ হয়েছে। লাগাতার অবরোধ, হরতালের কারণে দেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় বহু মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। সাধারণ মানুষ চায় না, তেমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটুক। সে কারণে তারা চায় দুই পক্ষের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক। ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণার পর সেই লক্ষ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে। এখন পরবর্তী পরিস্থিতি কেমন হবে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের ওপর। ঐক্যফ্রন্ট তফসিল পেছানোর যে দাবি জানিয়েছে তা যৌক্তিক বলেই মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য তাদের কিছুটা সময় তো দিতেই হবে। নির্বাচন কমিশনও এর আগে বলেছিল, সব দল সম্মত হলে তফসিল কিছুটা পিছিয়ে দিতে তারা রাজি আছে। মানুষ আশা করে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও বাস্তবতা উপলব্ধি করবে এবং বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে তফসিল কিছুটা পিছিয়ে দিতে তারাও সম্মত হবে।
নির্বাচন অর্থবহ করার জন্য শুধু বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণই যথেষ্ট নয়, সবাই যাতে সঠিকভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে, সেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করাও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।
নির্বাচন কমিশন সকল মহলের প্রত্যাশা পূরণে আগামী ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাংবিধানিকভাবে আমাদের নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট স্বাধীন কিন্তু কর্মকাণ্ডে সেই স্বাধীনতার প্রতিফলন ঘটে না। আমরা আশা করি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সেদিক থেকে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সম্ভাব্য সব কিছু করবে।