মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান :
আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে পৃথিবীতে অসংখ্য নবী ও রসূল প্রেরণ করেছেন। আর নবী ও রসূল প্রেরণের এ ধারাবাহিকতা আদম (আ:) এর প্রেরণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং মুহাম্মদ (সা.) এর প্রেরণের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটেছে। মুহাম্মদ (সা.) হলেন সকল নবী ও রসূলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলা বহু উপায়ে তাঁর মর্যাদা সমুন্নত করেছেন। তিনি হলেন সর্বপ্রকারের পাপ ও অন্যায় থেকে মুক্ত সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাঁর আদর্শের অনুকরণ করা এবং তাঁর নির্দেশসমূহ মেনে চলা প্রত্যেক মুমিনের প্রতি তার ঈমানের একান্ত দাবি। কিন্তু বর্তমানে এক শ্রেণীর অমুসলিম পন্ডিত ও তাদের ভাবশিষ্য মুসলিম বুদ্ধিজীবীরাও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিরুদ্ধে নানা কল্প-কাহিনী তৈরী করে বিভিন্নরূপ কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এভাবে তারা তাঁর সুমহাবন চরিত্র ও সীরাতের ওপর বিভিন্নরূপ কলঙ্ক লেপনের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এর পেছনে তাদের উদ্দেশ্য হলো, নতুন প্রজন্মের অন্তর থেকে আল্লাহর প্রতি ঈমান, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা এবং ইসলামের বিধানের প্রতি আনুগত্যের বিষয়গুলোকে মুছে দিয়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করা। তাই এ সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহকে সচেতন করা এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা গ্রহণ করা একান্ত কর্তব্য। অত্র প্রবন্ধে কুরআন ও হাদীসের আলোকে রাসূল (স.) এর মর্যাদা, রাসূল (সা.) -এর অবমাননার সংজ্ঞা, যুগে যুগে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি অবমাননা ও কটুক্তির ধরন, ইসলামী আইনে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর অবমাননার শাস্তি প্রভৃতি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।
আল-কুরআন ও আল-হাদীসের আলোকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মর্যাদা : রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ রসুল এবংতাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দাহ ও সর্বোত্তম মানব। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে সর্বোচ্চ মানবীয় মূল্যবোধ ও মননশীলতার সুমহান আধার করে সৃষ্টি করেছেন। তাঁকে দান করেছেন উন্নত ও পবিত্র চরিত্র এবং সুস্থ রুচিবোধ। তদুপরি শৈশবকাল থেকেই তিনি সর্বক্ষণ আল্লাহ তা’আলার রহমত ও হিফাযত দ্বারা পরিচালিত হন। তাঁর সকল আচার-আচরণ, গতিবিধি ও কথাবার্তা, তথা সকল কিছুই ছিল আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক সুনিয়ন্ত্রিত। মোটকথা, তিনি সব ধরনের পাপ, অন্যায় ও ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে মাসূম ছিলেন। আল্লাহ তাআলা নিজেই তাঁর অনুপম চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৬৮ : ৪।’’ অন্য এক আয়াতে তিনি বলেন, “নিশ্চয় আপনি সঠিক হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছেন।’’ ‘‘আল-কুরআন, ২২ : ৬৭।’’ মুহাম্মদ (সা.) এর সম্মান ও মর্যাদা মহান আল্লাহই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। বিরুদ্ধবাদীরা নবীকে নিয়ে যতই কটুক্তি এবং অবমাননাকর কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকুক না কেন তাঁর মর্যাদা কেউ কমাতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমরা আপনার খ্যাতিকে সমুন্নত করেছি।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৯৪ : ৪।’’
তদুপরি রাসূলুল্লাহ (সা.) হলেন বিশ্ববাসীর জন্য একটি অনুপম আদর্শ। তাঁর প্রত্যেকটি কথা, কাজ ও আচরণ সকলের জন্য একান্তই অনুকরণীয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাত তাআলা বলেন, “তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মাঝেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৩৩ : ২১।’’ এ কারণেই কুরআনের অজস্র জায়গায় তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণ পরিহার্য হবার কথা দ্ব্যর্থহনিভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রসূলুল্লাহ স.-এর একটি উল্লেখযোগ্য মর্যাদা হলো যে, তাঁর ওপর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে এবং মুহাম্মদরে প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, আর তা তাদের রবের পক্ষ থেকে (প্রেরিত) সত্য। তিনি তাদের মন্দ কাজগুফেলা তাদের থেকে দূর করে দেবেন এবং তিনি তাদের অবস্থা সংশোধন করে দেবেন।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৪৭ : ০২।’’
মহান আল্লাহ তাঁর মর্যাদাকে সমুন্নত করার জন্য তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠের নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর ওপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৩৩ : ৫৬।’’ এ প্রসঙ্গে আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত। নবী কারীম সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুণাহ মুছে দিবেন এবং তাকে দশটি মর্যাদায় উন্নীত করবেন।’’-ইমাম আন-সানাঈ, আস-সুনান, অধ্যায় : সিফাতুস সলাত, অনুচ্ছেদ : আল-ফাদলু ফিসসলাতি আলান-নাবিয়্যি (স.) হালব : মাকতাবাতুল মাতবু’আতিল ইসলামিয়া, ১৪০৬ হি. খ. ১. পৃ. ৩৮৫, হাদীস নং-১২২০, আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী এর মতে হাদীসটির সনদ সহীহ, সহীহ ও যঈফ সুনানুন নাসাঈ, হাদীস নং-১২৯৭।
যুগে যুগে যেসব নবী ও রাসূল আগমন করেছেন তাঁদের ওপর মুহাম্মদ (সা.) কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে, আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “ছয়টি দিক থেকে সকল নবীর ওপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষেপে ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক কথা বলার যোগ্যতা দেয়া হয়েছে, আমাকে ভীতিপ্রদ গাম্ভীর্য দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, গণীমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) আমার জন্যে বৈধ করা হয়েছে, আমার জন্য যমীনকে পবিত্র ও সিজদার ক্ষেত্রে পরিণত করা হয়েছে, আমি সমগ্র সৃষ্টির নিকট প্রেরিত হয়েছি এবং আমার মাধ্যমে নবুওয়ত-পরস্পরা শেষ করা হয়েছে।’’ ‘‘ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, অধ্যায় : আল-মাসাজিদ ও মাওয়াদিউস সনাত, কায়রো : মাকাতাবাহ আল-কুদসী, ১৩৬৭ হি. খ, ২, পৃ. ৬৪, হাদীস নং-১১৯৫।’’
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর অপর একটি মর্যাদা হলো, তাঁকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসা ঈমানের দাবী। যে ব্যক্তির মধ্যে রসূলের ভালোবাসা থাকবে না, সে মুমিন হতে পারবে না, এমনকি তাঁর প্রতি নিজের জীবনের চেয়েও অধিক অনুরাগ থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে “নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও ঘনিষ্ঠতর।’’ ‘‘আল-কুরআন, ৩৩ : ৬।’’
আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা সন্তান ও সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয় হবো।’’ ‘‘ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায় : আল-ঈমান, অনুচ্ছেদ : হুব্বুর রসূলি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা মিনাল ঈমান, বৈরূত : দারু ইবন কাছীর, ১৪০৭হি. পৃ. ১০, হাদীস নং-১৫।
সাহাবীদের চোখে রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন যাবতীয় মানবীয় ও নৈতিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এক অনুপম ব্যক্তিত্ব। সা’দ ইবনু হিশাম ইব্ন আমির (রা.) বলেন, “আমি আয়িশা (রা.) এর কাছে এসে বললাম, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চরিত্র সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, তাঁর চরিত্র তো আল-কুরআনই। তুমি কি আল্লাহর এই বাণী পড়নি-“আর নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’’ “ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল, আল-মুসনাদ, কায়রো : মু’আস্সাসাতু কুরতুবাহু, তা. বি. খ. ৬, পৃ. ১১১, হাদীস নং-২৪৮৪৪।’’ সাধারণত একজন মানুষের চরিত্র সম্পর্কে তার স্ত্রী-ই সর্বাধিক ভালো জানেন। নিজের আসল চরিত্র অন্যদের কাছে গোপন রাখা সম্ভব হলেও স্ত্রীর কাছে গোপন থাকে না। সে কারণেই হয়তো ঐ ব্যক্তি আয়িশা রা. কে প্রশ্ন করেছিলেন। উত্তরে আয়িশা রা. বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করলেন যে, যার দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল। তাঁর অনুপম চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে একবার আয়িশা রা. বললেন, ‘‘তিনি কখনো কোনো সেবককে প্রহার করেননি এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ব্যতীত তিনি কখনো স্বীয় হাত দ্বারা কাউকে প্রহার করেননি।’’ ‘‘ইমাম আদ-দারিমী, আস-সুনান, অধ্যায় : আন-নিকাহ, অনুচ্ছেদ। ফিল-নাহয়ি আন-যারবিন নিসা, বৈরূত : দারু ইহয়ায়িস সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ, তা.বি. খ. ২, পৃ.১৯৮, হাদীস নং-২২১৮। আলবানী হাদীসটিকে সহ্ীহ বলেছেন, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, হাদীস নং-৫০৭।
আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, “আমি দশ বছর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর খিদমত করেছি। আল্লাহর শপথ! এই সময়ের মধ্যে তিনি কখনো ‘উহ’ (বিরক্তিসূচক শব্দ) করেন নি। কোনো কাজের জন্য কখনো তিনি বলেননি, এই কাজটি কেন করোনি অথবা এই কাজটি কেন করেছো।’’ ‘‘ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, অধ্যায় : আল-ফাযায়িল, অনুচ্ছেদ : কানা রসূলুল্লাহি স. আহসানান নাসি খুলুকান, খ, ৭, পৃ. ৭৩, হাদীস নং-৬১৫১।
অবমাননার অর্থ : ‘অবমাননা’ শব্দের অর্থ হলো হেয় করা, অবজ্ঞা করা, অপমান করা, লাঞ্ছনা করা, তুচ্ছ করা, অসম্মান করা ইত্যাদি। আরবীতে এর প্রতিশব্দ হলো- ইসাআতুন, তাইয়্যিরুল, তাহক্বীরুন, ইহানাতুন ইত্যাদি। ‘‘ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, আরবী-বাংলা অভিধান [আল-মু’জামুল ওয়াফী], ঢাকা। রিয়াদ প্রকাশনী, ২০০৫, পৃ. ১৫২ ও ২১৩।’’ আর এর ইংরেজীতে এর প্রতিশব্দ হলো- Defame, Disrespect, Libel ইত্যাদি।
”Zillur Rahman Siddiqui edited, Bangla Academy English-Bengali Dictionary, Editor, Dhaka : Bangla Aecademy, 2004, p. 366; Oxford Advnced Learmer’s Dictonary, English-Bengali-English : Oxford Press & Publications, 2009, p.567.” অবমাননার বিভিন্ন রূপ : সাধারণত লোকেরা একজন অন্যজনকে বিভিন্ন মন্তব্য ও কর্মের মাধ্যমে অবমাননা করে থাকে। যেমন ঃ ক. দৈহিক কাঠামো বর্ণনার মাধ্যমে অবমাননা : কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তাকে বেঁটে, কুৎসিত, নাক লম্বা, কানে শোনে না, চোখে দেখে না ইত্যাদি দৈহিক ত্রুটির কথা উল্লেখ করে অপমান করা। খ. পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে অযাচিত মন্তব্যের মাধ্যমে অবমাননা : পোশাক-পরিচ্ছদের ত্রুটি (যেমন ছেঁড়া, ঢিলেঢালা, বেঁটে, আটসাঁট ও রুচিহীন প্রভৃতি) উল্লেখ করেও অনেক ক্ষেত্রে একে অপরকে অপমান করতে পারে। গ. বংশ সম্পর্কে বিভিন্ন কটুক্তির মাধ্যমে অবমাননা ঃ কেউ যদি কাউকে তুচ্ছ ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বলে, অমুকের বংশ নীচ বা ইতর অথবা অমুক অজ্ঞাতক বংশের, তবে এটাও সম্মান নষ্ট করার শামিল। কারণ ইসলামে নিজেকে উচ্চ বংশীয় এবং অন্যকে নিম্ন বংশীয় বাবা জায়িয নেই। ঘ. বদ অভ্যাসের কথা উল্লেখ করে অবমাননা : কেউ যদি কারো কোনো বদ-অভ্যাস ও আচার-আচরণের কথা উল্লেখ করে বলে, অমুক কাপুরুষ, ভীরু, অলস, পেটুক, নির্বোধ, স্ত্রীর কথায় উঠে বসে, পরিণামের কথা ভেবে কাজ করে না ইত্যাদিও মানহানির অন্তর্ভুক্ত। ঙ. ইবাদতের ত্রুটি বর্ণনা করে অবমাননা : কেউ যদি কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার মানসে তার ইবাদতের সমালোচনা করে বলে যে, সে ভালো করে নামাজ পড়তে জানে না, অথবা বলে যে, ‘তার হজ¦ হয়নি’ ইত্যাদিও অপমান ও অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। ‘‘সাইয়েদ আব্দুল হাই লাখনোবী, গীবত, দিল্লী : তাজ কোম্পানী, তা. বি. পৃ. ৭১। চ. পাপের কথা উল্লেখ করে অবমাননা ঃ যেমন কারো সম্পর্কে বলা যে, অমুক ব্যাভিচারী, অমুক পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, অমুক মদ্যপায়ী, অমুক চোর, অমুকের অন্তর খারাপ ইত্যাদি। এ সকল কথা বলেও একজন অন্যজনের সুনাম ও মর্যাদা বিনষ্ট করতে পারে। ‘‘প্রাগুক্ত’’ ছ, আচরণ নকল ও অভিনয় করার মাধ্যমে : কাউকে হেয় করার জন্য তার আচার-আচরণ ও কর্মকান্ডের নকল ও অভিনয় করে প্রকাশ করাও অবমাননার পর্যাযে পড়ে। জ. লেখনীর মাধ্যমে অবমাননা : লেখনী তথা সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিভিন্ন অবমাননাকর কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। যেমন কেউ যদি কাউকেক হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশ করে কিংবা বই পুস্তকে অপরের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরে, তবে তাতেও অবমাননা হয়। কেননা এর দ্বারা অপরের সম্মান ও মর্যাদা বিনষ্ট হয়।
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়া নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো অবমাননা বলে গণ্য হয় না। যেমন- ১. জনকল্যাণের জন্য সত্য দোষারোপ করা। ২. জনগণের প্রতি সরকারী কর্মচারীর আচরণ সম্পর্কে সংবিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করা। ৩. যে কোনো জনসমস্যা সম্বন্ধে কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সংবিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করা। ৪. আদালতসমূহের কার্যবিবরণী রিপোর্ট আকারে প্রকাশ করা। ৫. গণ-অনুষ্ঠানের গুণাবলী সম্পর্কে অভিমত প্রকাশ করা। ৬. কর্তৃত্ব সম্পন্ন ব্যক্তির নিকট সৎবিশ্বাসে কারো ভৎসনা করা। ৭. কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির নিকট সৎবিশ্বাসে কাউকে অভিযুক্ত করা। ৮. নিজের বা অন্য কারো স্বার্থ রক্ষার্থে সৎবিশ্বাসে কারো প্রতি দোষারোপ করা। ৯. সতর্ককৃত ব্যক্তির কল্যাণার্থে বা গণ-কল্যাণার্থে সতর্কতা অবলম্বন করা। ‘‘গাজী শামসুর রহমান, মানহানি, ঢাকা : খোশরোজ কিতাব মহল, ২০০৬, পৃ. ১৯। (অসমাপ্ত)