বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে মিরপুর টেস্ট

50

স্পোর্টস ডেস্ক :
মিরপুর টেস্টের আগে বাংলাদেশ দল গত আট ইনিংসে দুইশ’ রানই করতে পারেনি। অথচ এই দলেরই একজন ব্যাটসম্যান এখন এক ইনিংসেই ২১৯ রান করে ফেলেন! তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। দুঃসময় থেকে কী সুসময়টাই না এসে পড়ল। মিরপুর টেস্টের দুইদিন গেল। এই দুইদিনেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে এসে পড়ল। জিম্বাবুইয়ে থেকে এখনও ৪৯৭ রানে এগিয়ে থাকল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ৫২২ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার আগে ২৫ রান করে জিম্বাবুইয়ে। জিম্বাবুইয়েকে এত বিপদে ফেলার কাজটি করা সম্ভব হলো মুশফিকের ইতিহাস গড়া ও দেশসেরা ব্যক্তিগত ইনিংসে।
প্রথমদিনই সেঞ্চুরি করে ফেলেছিলেন মুশফিক। ১১১ রানে ছিলেন অপরাজিত। মুশফিকের এ সেঞ্চুরির সঙ্গে মুমিনুল হকের ১৬১ রানে প্রথমদিনই ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৩ রান করেছিল বাংলাদেশ। ধারণাই করা হচ্ছিল, এবার সিলেট টেস্টের দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে জিম্বাবুইয়েকে চেপে ধরবে বাংলাদেশ। তাই হলো। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৩৬), আরিফুল হক (৪) সুবিধা করতে পারেননি। তবে দমে যাননি মুশফিক। মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে এগিয়ে গেছেন। দুইজন মিলে অষ্টম উইকেটে ১৪৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন, যা দেশের হয়ে এই উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি। এই জুটি দলকে ৫২২ রানে নিয়ে যান। ততক্ষণে দেড়শ’, ডাবল সেঞ্চুরি করা হয়ে যায় মুশফিকের। মিরাজেরও দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি করা হয়ে যায়। মুশফিক যখন ৪২১ বলে ১৮ চার ও ১ ছক্কায় ২১৯ রান করেন, তখন ইনিংস ঘোষণা করে দেয় বাংলাদেশ।
এত বড় স্কোর গড়াতে মুশফিক ইতিহাসের পাতায় স্থানও করে নেন। দেশের হয়ে সাকিবের (২১৭ রান) রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড গড়েন। দেশের হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি করেন। এবার ৫৮৯ মিনিটে ৪২১ বল খেলে তা করেন। এ ইনিংসটি খেলতে গিয়ে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে উইকেটে থাকেন ও সবচেয়ে বেশি বল খেলেন মুশফিক। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কায় গলে প্রথমবার ২০০ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিক। এরপর তামিম (২০৬) ও সাকিব ডাবল সেঞ্চুরি করেন। মুশফিক আবারও ডাবল সেঞ্চুরি করে দেখান। সেঞ্চুরি করতে পারার ব্যর্থতার বোঝা গত ২২ ইনিংসে মাথায় নিয়ে চলছিলেন। সুযোগ যখন পেলেন তখন ডাবল সেঞ্চুরিই করে ফেললেন। সেই সঙ্গে ইতিহাসও গড়া হয়ে গেল মুশফিকের। কোন ম্যাচে উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলে ডাবল সেঞ্চুরি করার দিক দিয়ে সবার উপরে উঠে গেলেন মুশফিক। এর আগে মুশফিকসহ আটজন ব্যাটসম্যান তা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু কেউই দুইবার ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি। মুশফিক তা করে ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি লিখে রাখলেন। মুশফিকের এই ইতিহাস গড়া ইনিংসে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ডটিও হয়ে গেল। এর আগে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৫০৩ রানই ছিল সর্বোচ্চ। এবার সেই রেকর্ডও ভাঙ্গা হয়ে গেল।
সিলেট টেস্টের বিভীষিকা থেকে অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ে প্রথমদিন হ্যামিল্টন মাসাকাদজার উইকেটটি হারিয়ে এখন ভীষণ চাপে আছে। ফলোঅন এড়াতেই জিম্বাবুইয়েকে এখনও করতে হবে ২৯৮ রান। ম্যাচে যে বাংলাদেশ কতটা আধিপত্য বিস্তার করে আছে তা বোঝাই যাচ্ছে। এই ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে জেতারও এখন সুযোগ আছে বাংলাদেশের। সেই সুযোগ এখন কাজে লাগানো গেলেই হয়।
তৃতীয় দিনে ১০ রান করা ব্রায়ান চারির সঙ্গে তিরিপানো ব্যাট হাতে নামবেন। আজকের সকালের সেশনই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সেশনেই বোঝা যাবে, বাংলাদেশ ম্যাচে কিভাবে এগিয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত উইকেট ভাঙ্গেনি। তৃতীয় দিনে সেই সম্ভাবনা দেখা হচ্ছে। যদি ভাঙে তাহলে বাংলাদেশ স্পিনাররা জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের ওপর চড়াও হবেন। তখন ফলোঅনেও পড়ে যেতে পারে জিম্বাবুইয়ে। ফলোঅনে পড়লে, আবার জিম্বাবুইয়েকে ব্যাটিংয়ে নামালে রান অতিক্রম করার আগেই অলআউট হলেই তো বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে জিতে গেল। বাংলাদেশের আর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলা লাগল না। সেই সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা যদি বিশেষ কোন খেলা না খেলতে পারেন, তাহলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ যে বাংলাদেশের হাতে আছে, তা থেকে বড় জয়ই তুলে নেয়া যেতে পারে।