বিতর্কিত ৩২ নম্বর ধারা রেখেই ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮’ পাস হয়েছে। গত বুধবার জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। নতুন আইনের খসড়া তৈরির পর সাংবাদিক, লেখক-গবেষক, আইনজীবী, সুধীসমাজ, পেশাজীবী মহল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আপত্তি তুলেছিল। এ নিয়ে অনেক বিতর্ক-সমালোচনা হয়েছে। সেসব খুব একটা আমলে নেওয়া হয়নি। বিল পাসের পর বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সবাই বলছে, এটি মত প্রকাশ ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর অপব্যবহারের আশঙ্কাই বেশি।
বিলটি সংসদে তোলার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নিয়ে বিল চূড়ান্ত করে সংসদে জমা দেয়। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গণমাধ্যম মহলের প্রতিনিধিরা এবং সংশ্লিষ্ট আরো অনেকে উপস্থিত হয়ে কিছু সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা আরো বিশদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব বাতিলের কথা বলেছিলেন তাঁরা। বলা হয়েছিল, বিলের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা বাতিল বা সংশোধন না করলে স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে। সংসদীয় কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশে সেসব কথা রাখাও হয়। কয়েকটি ধারায় কিছু পরিবর্তনও আনা হয়। কিন্তু ৩২ ধারাসহ বেশির ভাগ উপধারা অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে।
বিলের ৩২(১) ধারায় বলা হয়েছে, অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের আওতাভুক্ত অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটন করলে বা করতে সহায়তা করলে অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। ৩২(২) ধারায় বলা হয়েছে, ৩২(১)-এ উল্লিখিত অপরাধ পুনর্বার করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। ২৫(ক) ধারায় বলা হয়েছে, জেনেবুঝে মিথ্যা, আক্রমণাত্মক ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করলে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা জরিমানা হবে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। ২৫(খ) ধারায় বলা হয়েছে, পুনর্বার এ অপরাধের জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। এমন আরো অনেক ধারাই নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রয়েছে।
বিল পাসের পর বিভিন্ন মহল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছে, এটি বাক্স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ক্ষতিকর। তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা হয়রানিমূলক ছিল। এ ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল। নতুন আইনের ৩২ ধারায় এটি আরো বিশদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একাডেমিক গবেষণার ক্ষেত্রেও এটি বাধা হবে। এ আইন সাংবিধানিক অঙ্গীকার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, বাড়ছে এর অপপ্রয়োগও। তাই সাইবার অপরাধ বাড়ছে। সরকার বলছে, এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বা দমনের জন্য এ আইন করা হয়েছে; সংবাদপত্র বা বাক্স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়। মত প্রকাশে বাধা যেন না থাকে সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, আইন কার্যকর করতে গিয়ে সরকার কতটুকু সতর্ক থাকে। সৃষ্ট শঙ্কা দূর হবে তো!