আজ পবিত্র আশুরা ॥ ঐতিহাসিক বিষাদময় দিন

117

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র আশুরা আজ। ইসলামের ইতিহাসে একটি ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন। ইসলামী পঞ্জিকা অনুযায়ী মহরম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনেই কারবালা প্রান্তরে ঐতিহাসিক বিষাদময় ঘটনার জন্ম হয়েছিল। এছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনেই সংঘটিত হয়েছিল বলে মুসলিম বিশ্বে এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবেই দিনটি অধিক পরিচিত। দেশেও আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র আশুরা পালিত হবে। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারবালা প্রান্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে দিনটি পালন করা হলেও এর তাৎপর্য আরও অনেক ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে এই দিনে অত্যাচারী বাদশা ফেরাউনকে তার বাহিনীসহ সাগরে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল। নবী মুসা (আ.) তার দলবল নিয়ে মিসর ত্যাগ করেছিলেন। এ ঘটনাটিই মূলত প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এছাড়াও এই দিনে নুহু আ. কিস্তি ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে জুডি পাহাড়ে নোঙ্গর করেছিল। এই দিনেই আসমান জমিন সৃষ্টিসহ আরও যেসব ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে তা নিয়ে ইসলামী চিন্তবিদরা ভিন্নমত পোষণ করেন।
তবে মহাগ্রন্থ আল কোরানে যে কয়টি মাসকে পবিত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে মহরম মাস রয়েছে। আল কোরানের বিধান অনুযায়ী পবিত্র মাসে যুদ্ধবিগ্রহ করা নিষিদ্ধ। এছাড়াও পবিত্র মাসে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা, পাপাচার থেকেও দূরে থাকতে বলা হয়েছে। এ কারণে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের কাছে এই মাসটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আশুরার মহান শিক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বিভিন্ন কারণে এদিনটি ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পালন করা হলেও শিয়ারা আশুরাকে কারবালার বিষাদময় ঘটনা স্মরণ করে পালন করে থাকে। তাদের পক্ষ থেকে এদিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের জন্য আজ বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের তাজিয়া মিছিল, মাতম অনুষ্ঠান ও শোক কৃত্যের আয়োজন। পুরান ঢাকার হোসেনি দালানসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে এই তাজিয়া মিছিল ও অনুষ্ঠান পালন করা হবে।
এছাড়াও আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র আশুরা পালনের জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজা, নামাজ, জিকির-আসকারের ভেতর অতিবাহিত করবেন। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন গতকাল বায়তুল মোকাররম মসজিদে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেছে।
আরবি ৬১ হিজরির এই দিনে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহীদ হন। সেদিন ছিল ১০ মহরম। এ ঘটনায় শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়।
আরবি ৬০ হিজরিতে এজিদ বিন মুয়াবিয়া পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি নিজেকে একজন স্বৈরাচারী এবং অত্যাচারী খলিফা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। মদপানের মতো অনেক নিষিদ্ধ বিষয়কে তিনি বৈধ ঘোষণা করেন। ইমাম হুসাইন (রা.) এজিদের আনুগত্য অস্বীকার করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে কুফায় গমন করেন। সেখানে দুই পক্ষে অসম যুদ্ধে ইমাম হুসাইন তাঁর ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদাত বরণ করেন। এভাবেই তিনি ইসলামের ইতিহাসে কোন ধরনের জুলুম ও অত্যাচারের কাছে নতি স্বীকার না করার দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করে যান।
এদিকে পবিত্র আশুরা যথাযথভাবে পালনের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাজিয়া মিছিলে ছুরি-তলোয়ার বহন নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। তাজিয়া মিছিলে প্রবেশের সময় দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, টিফিন ক্যারিয়ার ও ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সেই সঙ্গে মিছিলে আতশবাজি ও পট্কা ফোটানো নিষিদ্ধ করা হয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে কয়েক স্তরের সুদৃঢ় নিরাপত্তা ও প্রবেশের চার মুখে চেকপোস্টে সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে। আশুরা উপলক্ষে এখনও কোন জঙ্গী হামলার আশঙ্কা নেই।