প্রতিবছর সকল বিভাগীয় কমিশনার ও ৬৪ জেলা প্রশাসকের অংশগ্রহণে রাজধানীতে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক বা নিয়মিত কার্যবিধি হলেও এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক প্রশাসনিক চিত্র উঠে আসে। একইসঙ্গে সিভিল সার্ভিসের একজন জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের সদস্য ও সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ আমলা হিসেবে জেলা প্রশাসকদের মনোভাব সম্পর্কেও সরাসরি একটি ধারণা লাভ সম্ভব হয়। সরকার প্রধানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাদান সম্মেলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক। এ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, মুখ্য সচিব, মুখ্য সমন্বয়কসহ সকল সচিব উপস্থিত থাকেন। ফলে এই সম্মেলনের বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। এবারের সম্মেলনটি এ কারণে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ যে বর্তমান সরকারের আমলে এটিই শেষ সম্মেলন। সম্প্রতি সমাপ্ত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে অনেক বিষয় উঠে এসেছে। যার ভেতর দিয়ে জেলা পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা, ভূমি প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের বাস্তব চিত্র উপস্থাপিত হয়।
ডিসিদের সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন, যার মধ্যে নাগরিকদের সর্বোচ্চ সরকারী সেবা নিশ্চিত করা, সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি বন্ধ, যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রফতানি নির্বিঘœ করা, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করা অগ্রাধিকার পেয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘এখানে আমি বলতে চাই, বিনা দ্বিধায় আপনারা টেন্ডারবাজি, পেশীশক্তি, সন্ত্রাস এবং মাদক নির্মূল করবেন। এখানে কে কোন্ দল করে, কে কী করে সেগুলো দেখার কোন দরকার নেই।’ প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্যের পর তাঁরা কর্তব্য পালনে পিছপা হবেন না এমনটাই প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না এমনটাই দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকবৃন্দ ভাবতে চান। এই সম্মেলনে ডিসিদের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব আকারে ২৩টি অনুরোধ রাখা হয়েছে সরকারের কাছে। যার মধ্যে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো থেকে শুরু করে আইনগত কিছু জটিলতা নিরসনের কথাও বলা হয়েছে। সেগুলোরও যৌক্তিক সমাধান অনস্বীকার্য। এবার ডিসিরা ৩৪৭টি সুপারিশ করেছিলেন যা গৃহীত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এগুলো স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই নয়, সামাজিক অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অনেক দেশকে আমরা ছাড়িয়ে গেছি। এ অবস্থা ধরে রাখতে এবং আরও এগিয়ে নিতে প্রয়োজন সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দলনিরপেক্ষ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট।
সাধারণ মানুষ আশা করে জেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকগণ যে জনসেবক সেটি অবশ্যই তারা স্মরণে রাখবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর জনহিতকর ও যুগোপযোগী নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে মান্য করার মধ্য দিয়ে দেশসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।