বনানীর বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এক দিন পর গুলশানের ডিএনসিসি কাঁচাবাজার, ধানমণ্ডি, গুলশান ২ নম্বর সেক্টর, মগবাজার এবং সিলেট ও নরসিংদীতে আগুনের ঘটনা নিঃসন্দেহে বড় ধরনের ‘ওয়েক আপ অ্যালার্ম’। নিমতলীর পর চকবাজারের চুড়িহাট্টা, এরপর বনানী। পুরান ঢাকা থেকে আধুনিক ঢাকা—নিরাপত্তাহীনতা সর্বত্রই। পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ম অনুযায়ী ছয়তলার ওপর কোনো আবাসিক ভবন নির্মাণ করতে হলেই ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নিপ্রতিরোধসংক্রান্ত ছাড়পত্র নিতে হবে। অন্যদিকে ১০ তলা বা তার চেয়ে উঁচু কোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনিরাপত্তাসংক্রান্ত সনদ আনতে বলে রাজউক। আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক মিলিয়ে রাজধানী ঢাকায় বহুতল ভবনের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু কোনো ভবনেই কি পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা আছে? ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নিনির্বাপণসংক্রান্ত ছাড়পত্র নিয়েছে, এমন সব ভবনেরও অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিতান্তই অপ্রতুল। নতুন ঢাকার বেশির ভাগ ভবনের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। বেশির ভাগ ভবনেরই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি দেওয়ার যন্ত্র ফায়ার স্প্রিংকলার দূরের কথা, ফায়ার এক্সটিংগুইশার নেই। ফায়ার অ্যালার্মও নেই এসব ভবনে। কোনো কোনো ভবনে হয়তো বিকল্প সিঁড়ি আছে, অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার অনেক ভবনে অগ্নিনির্বাপণসামগ্রী থাকলেও এগুলো কতটা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এমন অবস্থায় বড় ধরনের কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সম্পদ ও প্রাণহানি রোধ করা যে কঠিন হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বনানীর বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র বহুতল ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন অ্যাকশনে যাওয়ার সময়। মহানগরীকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে তুলতে অ্যাকশনের কোনো বিকল্প নেই। ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে সিটি করপোরেশন ও রাজউককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কোনো ভবন নিয়ম মেনে তৈরি না হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ারও কোনো বিকল্প নেই। সিটি করপোরেশন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে তা জনগণের কাছে প্রশংসিত হবে। আমরা আশা করব, সিটি করপোরেশনের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাজধানীর বহুতল ভবনগুলোকে অগ্নি ও ভূমিকম্প থেকে নিরাপদ করবে।