পাহাড়ি ঢল আর উজানে ভারি বর্ষণের কারণে দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকার সঙ্গে তিস্তা নদীর পানিও বাড়ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও ভারি বর্ষণের কারণে চলতি মাসেই দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে। রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম জেলার বেশ কিছু গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে মাঠের আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ২২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় আছে এসব নদী অববাহিকার ৩০ হাজার পরিবার। নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডিমলা উপজেলার ১৫ গ্রামের পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। দেখা দিয়েছে ভাঙন। বন্যার সঙ্গে নদীর ভাঙনে জেলার দুই শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ওদিকে সিলেট অঞ্চলে সুরমা, কুশিয়ারা, নেত্রকোনায় সোমেশ্বরীসহ কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। সুরমার পানি বেড়ে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বন্যায় ফসলহানির আশঙ্কা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ সময় আউশ ধান ঘরে ওঠার কথা। ঠিক এই সময় বন্যা দেখা দিলে ক্ষেতের ধান ডুবে যেতে পারে। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে ধান আগাম তোলার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমনের বীজতলা। আমনের বীজতলা তলিয়ে গেলে কী করে ভাসমান বীজতলা তৈরি করা যায় সে বিষয়েও কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিতে হবে। সবার আগে সবাইকে সমন্বিতভাবে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর যেসব রোগবালাই দেখা দেয়, তা প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে বন্যাদুর্গত মানুষের ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও এখন থেকে উদ্যোগী হতে হবে।