আমকে বলা হয় ফলের রাজা। কিন্তু কয়জন নিশ্চিন্ত মনে এই ফলের স্বাদ উপভোগ করতে পারবে? রসনার টানে আম মুখে নিলেও মনে ভয় থাকবে, না জানি আমে কী বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো হয়েছে। বাজারে বিষমুক্ত আমের সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিবছরই নানা রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নানা ধরনের কর্মসূচিও নেওয়া হয়। কিন্তু এসবের খুব একটা সুফল পাচ্ছি কি আমরা?
সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের পশ্চিমাঞ্চল আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। জানা যায়, বাজারে আম আসতে শুরু করায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন আমে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো বন্ধ করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু অসাধু কিছু ব্যবসায়ী সেসব উদ্যোগকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে। বাজারে নজরদারি থাকায় তারা বাজার থেকে দূরে বাড়িঘরে অপরিপক্ব আম মজুদ করে এবং সেগুলোতে ক্ষতিকর রাসায়নিক স্প্রে করে রাতের বেলা ট্রাকে চাপায়। ঢাকায় বা দেশের অন্যান্য স্থানে পৌঁছতে পৌঁছতে রাসায়নিকের কারণে সেসব আমের রং বদলে পাকা আমের মতো হয়ে যায়। ক্রেতারা এসব আম কিনে প্রতারিত হয়। এসব আমে পাকা আমের স্বাদ যেমন থাকে না, তেমনি শরীরের জন্যও তা হয় মারাত্মক ক্ষতিকর। এমন কিছু আমের ট্রাক জেলা প্রশাসন আটকও করেছে। তার পরও অনেক ট্রাক নিশ্চয়ই সারা দেশে এমন বহু আম ছড়িয়ে দিয়েছে। ফল পাকাতে যে কার্বাইড ব্যবহার করা হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। রেডিও-টেলিভিশনে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! শুধু ফল পাকাতে নয়, ফল যাতে দ্রুত পচে না যায় সে জন্যও ফরমালিনজাতীয় রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। ফল বা সবজি যাতে পোকায় নষ্ট না করে সে জন্য যেমন গাছে কীটনাশক ছিটানো হয়, তেমনি ফল বা সবজি সংগ্রহ করেও কীটনাশক মেশানো পানিতে চুবিয়ে নেওয়া হয়। অথচ কীটনাশকভেদে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব ফল বা সবজি খেলে সরাসরি মানবদেহে বিষক্রিয়া ঘটে। কিন্তু কে তা বিবেচনা করে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের লাভটাই যে মুখ্য।
মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে দেশে অনেক আইন রয়েছে। সেসব বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে অনেক কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা। কিন্তু কাজের কাজ প্রায় কিছুই হচ্ছে না। বাজারে ভেজাল বা বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো খাবারের ছড়াছড়ি। আমরা আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আরো তৎপর হবে। মানুষ যাতে নিঃশঙ্কচিত্তে বছরের প্রধান ফল আম কিনতে ও খেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।