রাত পোহালেই ঈদ

167

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ত্যাগের মহিমা নিয়ে বছর ঘুরে মুসলমানদের ঘরে আবার এসেছে ঈদ-উল- আযহা। আগামীকাল বুধবার দেশব্যাপী পালিত হবে পবিত্র এই উৎসব। ত্যাগের উৎসবে শামিল হতে সবাই ব্যস্ত এখন কোরবানির পশু কেনাকাটায়। পাশাপাশি প্রিয়জনদের সঙ্গে উৎসবে শরিক হতে রাজধানীবাসী এখন ঘরমুখো। বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানও এটি। দিনটিকে ঘিরে ইতোমধ্যে সারাদেশে শুরু হয়েছে আনন্দ ও উৎসবের বন্যা। আল্লাহ পাকের প্রতি অপার আনুগত্য এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে প্রতিটি ঘরে। বুধবার ঈদের নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নামে পশু কোরবানিতে মেতে উঠবেন। এজন্য সারাদেশে ১ কোটি ১৬ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে।
কোরবানির পাশাপাশি ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। ঈদের নামাজ শেষেই কোরবানির বিধান রয়েছে। তাই দলে দলে মুসল্লিরা আগে ঈদের নামাজে শরিক হবেন। অন্যবারের ন্যায় এবারও দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নামাজ আদায় করবেন। তাদের বসার জন্য পৃথকস্থান নির্ধারিত করা হয়েছে। এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি মুসলিম উম্মার সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। এছাড়া প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পক্ষ থেকে ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীর শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে যার যাকাত দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে তার ওপর ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে পশু কোরবানি করাও ওয়াজিব (ধর্মীয় বিধান)। ঈদ-উল-আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই দিন পর্যন্ত পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত। ঈদ-উল-আযহার নামাজ শেষে কোরবানির করতে হবে। বাংলাদেশের মুসলিমরা সাধারণত গরু খাসি বেশি কোরবানি দিয়ে থাকেন। বিধান অনুযায়ী এক ব্যক্তি একটি গরু, মহিষ বা খাসি কোরবানি করতে পারবেন। তবে গরু মহিষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ ভাগেও কোরবানি করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোরবানির জন্য খাসির বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। আর গরু মহিষের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে।
কোরবানির ত্যাগের মহিমা প্রকাশ করতে গিয়ে তাইতো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন ‘ওরে হত্যা নয়, ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন! দুর্বল ! ভীরু ! চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুব্ধ মন! ধ্বনি উঠে রণি’ দূর বাণীর, আজিকার এ খুন কোরবানির। ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সরকারী ছুটি। তবে ঈদের ছুটি সাপ্তহিক ছুটি এবং শোক দিবসের ছুটি পাশাপাশি হওয়ায় গত ১৪ আগষ্ট বিকেল থেকে মানুষ বাড়ির পানে ছুটতে শুরু করেছে। সড়ক, নৌ, রেলপথগুলো এখন ঘরে ফেরা মানুষের পদচারণায় মুখরিত। যদিও ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি শেষ নেই।
ইসলামের পরিভাষায় কোরবানি হলো নির্দিষ্ট পশুকে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তারই নামে জবেহ করা। ঈদ-উল-আযহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, মনের পশু অর্থাৎ কু-প্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা। কোরবানির ইতিহাস অতি প্রাচীন। মহান আল্লাহ ইব্রাহীম (আ.) কে তাঁর শেষ বয়সে প্রিয়তম পুত্র ইসমাইল (আ.)কে কোরবানি করার নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় ছেলেকে কোরবানি দেয়া তাঁর এক কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু তিনি তাঁর মহান রবের হুকুমে নত হলেন। নিষ্পাপ পুত্র ইসমাইল (আ.) ও নিজেকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। এক পর্যায়ে পিতা তাঁর পুত্রকে জবাই করতে যখন উদ্যত ঠিক তখনই মহান আল্লাহর কাছে ঈমানের কঠিন পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন।
আল-কোরআনে এই মহিমান্বিত ত্যাগের ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইব্রাহীম (আ.) তাকে বললেন, হে বৎস্য ! আমি স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে কোরবানি করছি। এখন তোমার অভিমত কী ? সে বলল, হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ইব্রাহীম (আ.) তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করলেন তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম ! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে জবাই করার জন্য দিলাম এক জন্তু।’ হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর অনুপম ত্যাগের অনুসরণে বিশ্ব মুসলমানরা কোরবানি করে আসছেন। তারই নিদর্শনস্বরূপ প্রতিবছর হজ পালনকারীরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন।
প্রায় ৪ হাজার বছর আগে হযরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্র কোরবানির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় প্রতিবছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহপাকের আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)ও এই আদর্শ অনুসরণ ও বহাল রাখতে আদিষ্ট হন। তিনিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন এবং তার উম্মতদের জন্য এই আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের কঠোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন।