সিলেটের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে নব দিগন্তের সূচনা করেছে শ্রেণী কক্ষে ডিজিটাল পাঠাদান পদ্ধতি

38

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
সিলেটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে শ্রেণী কক্ষে পাঠদানে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রেণী কক্ষে পাঠদান চালু করতে বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকদেরও আইসিটি ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলা হচ্ছে। প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের নিজ-নিজ বিদ্যালয়ে পাঠদানে এখন ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। এদিকে প্রশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি করে সেগুলো ল্যাপটপে দিয়ে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা দেয়ায় সাধারণ শিক্ষার চেয়ে শিক্ষার্থীরা বেশী পাঠদানে মনোযোগি হচ্ছে। ইতিমধ্যে সিলেট পিটিআইয়ের অধিনে দক্ষ প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক ১২ দিনের আইসিটি ট্রেনিং সম্পন্ন করেছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বিকেলে সিলেট পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারে অষ্টম ব্যাচের আইসিটি ইন এডুকেশন বিষয়ক প্রশিক্ষণের সমাপনী ও প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সনদ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন- সিলেট পিটিআইয়ের সুপারেন্টেন্ড একেএম ইব্রাহিম। এ সময় অনান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) মো: খছরুজ্জামান, অরুপ রতন দাশ, শামীম আহমদ, প্রশিক্ষক (কম্পিউটার সায়েন্স) আবুল কাশেম। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- শিক্ষক সাধন চন্দ্র ধর, আনোয়ারা বেগম পুরকায়স্থ, বদরুল আলম, ছালেহ আহমদ, মারুফ আহমদ প্রমুখ।
সদ্য আইসিটি ট্রেনিং সম্পন্নকারী বালাগঞ্জ উপজেলার প্রধান শিক্ষক শিউলী বেগম, সহকারী শিক্ষক ঝলক গোস্বামী গোলাপগঞ্জের সহকারী শিক্ষক আব্দুল কদ্দুছসহ একাধিক শিক্ষক বলেন- আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান দিতে পারছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এতে উৎসাহী হয়ে পাঠদানে মনোযোগী হচ্ছে। সর্বোপরী ডিজিটার কনটেন্ট তৈরীর মাধ্যমে বাস্তবমুখি শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। আমরা শিক্ষকরাও এ থেকে অনেক কিছু রপ্ত করছি।
অষ্টম ব্যাচের আইসিটি প্রশিক্ষণার্থী আনোয়ারা বেগম পুরকায়স্থ, রুফিয়া বেগমসহ একাধিক প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক জানান, ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে শিক্ষাদান পদ্ধতি শিখতে পেরে আমরা অজানাকে জানতে পেরেছি। বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তির নির্ভর উপকরণের সঙ্গে অতি পরিচিত। তাই সনাতন চক, ডাস্টার, ব্লাকবোর্ড দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকটা তথ্যগত ধারনা দেয়া সম্ভব হয়না। তাই এখন থেকে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরের সাহয্যে ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে একাধিক স্থির বা চলমান চিত্রের সাহায্যে ডিজিটাল পাঠদান প্রদ্ধতির শিক্ষার্থীদেরকে যে কোনো বিষয়ে পূর্ণ ধারা দেওয়া সম্ভব হবে।
সিলেট পিটিআইয়ের ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) মো: খছরুজ্জামান ও আবুল কাশেম বলেন- শ্রেণীকক্ষে সঠিকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান নিশ্চিত করতে আমরা শিক্ষকদের দক্ষ করে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি কনটেন্ট তৈরীতে শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে। কারণ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হলে শিক্ষকরা নিজের সফলতা দুর্বলতা সহজেই চিহ্নিত করতে পারবেন। কম্পিউটার সম্পর্কে কয়েকটি বিষয়ে মোটামুটি দক্ষতা অর্জন করলেই ডিজিটাল প্রদ্ধতিতে পাঠদান দেয়া সম্ভব। এছাড়া শিক্ষক বাতায়ন থেকে তৈরীকৃত অসংখ্য কন্টেন্ট ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন করে সহজেই শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করতে পারছেন। এ বিষয়ে শিক্ষক একবার অভ্যস্থ হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উভয়ই আনন্দ লাভ করবেন এবং দিন-দিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পাবে।
সিলেট পিটিআইয়ের সুপারেন্টেন্ড একেএম ইব্রাহীম বলেন- ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে শিক্ষাদান পদ্ধতি শিক্ষার ক্ষেত্রে এক নব দিগন্তের সূচনা করেছে। প্রধানস্ত্রীর এই উদ্যোগ শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি এক যুগান্তকারী নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। ডিজিটাল কনটেন্টের ১২দিন ব্যাপি প্রশিক্ষণ প্রদান চলামান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষকদের আইসিটি প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা যাতে সঠিক ভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন এবং ভাল করে শিখতে পারেন সে ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ চলাকালিন সময়ে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।