সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
কাজ শেষ হওয়ার আগেই হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধ ধসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ‘দেখার হাওর’-এর দোয়ারাবাজার অংশের সুরমা নদীর পাড়ের বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার গত শনিবার (৩১ মার্চ) রাতে ধসে যায়। স্থানীয়রা বলেছেন, বাঁধের এই অংশটি ধসে পড়ার আশঙ্কা আগেই করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) দায়িত্বপ্রাপ্তরা তা আমলে নেননি। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা সকালে বাঁধের ধসে যাওয়া অংশ পরিদর্শন করে আরও পেছনের দিকে সরিয়ে বাইপাস বাঁধের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জের বৃহৎ হাওরগুলোর অন্যতম ‘দেখার হাওর’। সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত এই হাওরে ১২ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। এবার এই হাওরকে অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকার হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। দোয়ারাবাজার অংশেই বাঁধের কাজ হয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ টাকার। এই উপজেলার আমবাড়ীর পাশের হাজারীগাঁও পয়েন্ট থেকে শুরু করে মান্নারগাঁও, জয়নগর, কাঁটাখালী, আজমপুর, ইদনপুর, পশ্চিম মাছিমপুর, দোহালিয়া, হরিপুর, কাঞ্চনপুর, কিত্তে রাজনপুর ও প্রতাপপুর পর্যন্ত একটি দীর্ঘ বাঁধ করা হয়েছে। এই বাঁধের ১০৭/২ নম্বর পিআইসির বরাদ্দ ছিল ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা। বাঁধ নির্মাণের সময় স্থানীয় লোকজন নদীর পাড় কেটে মাটি না তুলে বাঁধের ভেতরের একটু দূর থেকে মাটি কাটার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি আমলে নেয়নি পিআইসির লোকজন। বাঁধ ধসের ঘটনায় চিন্তিত হাওর পাড়ের লোকজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইসির সেক্রেটারি ইউপি সদস্য প্রজিত দাস বললেন, ‘বাঁধ ভেঙে নদীতে চলে গেছে তো আমি কী করবো।’ কাটাখালির বাসিন্দা অতুল ধর বলেন, ‘এখন ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে বাঁধের একাংশ ধসে যাওয়ায় সবাই চিন্তিত।’ বাঁধের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবোর উপসহকারী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাঁধ যেখানে দেওয়া হয়েছে, তার নিচের অংশটুকু হয়তো ফাঁকা ছিল। এজন্য তা ধসে গেছে। পিআইসির লোকজনকে নদীর পাড় থেকে মাটি কাটতে নিষেধ করা হয়েছিল। এরপরও তারা কোনও কোনও স্থানে নদীর পাড় থেকে মাটি কেটেছে।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, ‘দেখার হাওরের কাটাখালি থেকে জালালপুর বাঁধ ধসের খবর পেয়ে সকালেই অন্যান্য কর্মকর্তাসহ আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ইতোমধ্যেই ভেঙে যাওয়া অংশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে বাঁধ করা হয়েছে। আগে থেকেই আমরা আরও পেছনে সরিয়ে বাঁধ দেওয়ার কথা বলেছিলাম। তখন জমির মালিকরা জমি নষ্ট হওয়ার কথা বলে বাঁধ সরিয়ে আনতে দেননি। পিআইসির লোকজনকে নদীর পাড়ের দিক থেকে মাটি না তোলার জন্য বলা হয়েছিল। তারা যেখান থেকে মাটি গর্ত করে তুলেছেন, সেটুকু ভরাট করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা সেটিও করেননি।’ ১০৭/২’এর পিআইসির সভাপতি মাহমুদুর রহমান আজাদ বললেন, ‘বাঁধের নিচের নদীর পাড়ের অংশ ফাঁকা ছিল, এটি আগে দেখা যায়নি। মাটি না পেয়ে নদীর পাড় থেকে কোথাও কোথাও বাধ্য হয়ে মাটি তোলা হয়েছে। কিন্তু যে অংশটি দেবেছে, ওখানে নদীর পাড় থেকে মাটি তোলা হয়নি।’