চলতি বছরকে বলা হচ্ছে নির্বাচনের বছর। দেশের সব শ্রেণির মানুষের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দৃষ্টি একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশগ্রহণ না করায় অনেক প্রশ্ন ওঠে। আগামী নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে বিষয়ে সরকারি দলও সমান সতর্ক। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে এবারের নির্বাচন হতে হবে। তিনিও চান নির্বাচন যেন কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।
নির্বাচন কিভাবে গ্রহণযোগ্য করা যায়, তা নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাদের। অন্যদিকে দলের চেয়ারপারসন আদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়ায় নতুন এক বাস্তবতা দলটির সামনে এসে পড়েছে। এ অবস্থায় দলটি মনে করছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ হবে না। জাতিসংঘ কমনওয়েলথ ও ইউরোপীয় কমিশনকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করছে তারা। যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও জোর দিয়ে বলেছেন, আগামী দিনে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় উভয় দেশ।
এ কথা অনস্বীকার্য, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো দেশের উন্নয়ন গতিশীল হতে পারে না; দীর্ঘস্থায়ী হয় না। জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনেরও পূর্বশর্ত হচ্ছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য সব রাজনৈতিক দলকে এখন থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় আছে। সবাই জয়ী হওয়ার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকে। কিন্তু জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতেই নির্ধারিত হয় জয়-পরাজয়। কাজেই জয়ের জন্য নির্বাচনের মাঠে অবতীর্ণ হলেও পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা অবশ্যই সব দলের মধ্যে থাকতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি দলকেও অন্য রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি নির্বাচন কমিশনকেও নিরপেক্ষ ও কঠোর হতে হবে। সবার সহযোগিতা ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না।