কাজিরবাজার ডেস্ক :
ব্যবসায়ীদের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের দেশ ও মানুষের কথা ভাবতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) গণভবনে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ আহ্বান জানান।
সভায় তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশের সকল নাগরিকের কাছে যথাযথ মূল্যে সরবরাহ করতে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘২০০৯-এ সরকার গঠনের পর আমাদের ব্যবসায়ীরা সে যে দলেরই হোক আমরা কিন্তু ওখানে দল বাছতে যাইনি। যে দলেরই হোক, যাতে তারা ব্যবসাটা ব্যবসায়ী হিসেবে করতে পারে, সেই পরিবেশটা আমি সৃষ্টি করে দিয়েছি। ’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখানে কোনো হাওয়া ভবনও নেই, আর পিএমও-তে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে) কোনো উন্নয়ন উইংও নাই যে, হাওয়া ভবনে এক ভাগ দিতে হবে, উন্নয়ন ভবনে এক ভাগ দিতে হবে বা অমুক জায়গায় দিতে হবে। এই যন্ত্রণা তো আপনাদের ভুগতে হয় না এখন আর। এটা তো আপনারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন, সেই যন্ত্রণা থেকে তো সবাই মুক্ত। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন প্রফিটের (লাভ) ব্যাপারে চিন্তা করেন। আগে তো একটা বড় অংশ হাওয়া হয়ে যেতো। এখন আর সেই হাওয়া হওয়ার ব্যবস্থাটা নাই। সেখান থেকে সবাইকে মুক্ত রেখেছি। তো সেটাই মাথায় রেখে যদি মনে করেন যে, দেশের কথা চিন্তা করে, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে…। ’
টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, ‘এতদিন এই ১৪ বছর একটানা ধারাবাহিকভাবে আপনারা লাভজনক ব্যবসাটা করে গেছেন, এখনকার… আমরা কিন্তু করোনার সময়ও সেটা মোকাবিলা করলাম। প্রণোদনা দিলাম, বিশেষ প্রণোদনা, আমার কাছে কেউ এসে দাবি করেননি। কেউ বলে নাই। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার একটা টিম খুব ভালো কাজ করছিল কোথায় কী করা যেতে পারে। আমার অর্থনীতির চাকাটাকে চলমান রাখতে হবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো তাদের ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ, তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড বন্ধ, সব কিছু। আমরা বলেছি, আমরা এখানে বন্ধ হতে দেবো না, আমার এখানে চালু করে রাখতে হবে। শ্রমিকদের বেতন, এই যে গার্মেন্টস, তার বেতন তো আমি দিয়ে দিলাম সব। প্রণোদনা প্যাকেজ করলাম, বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম। ’
দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন একটু যখন অপজিশন মাঠে নেমে গেছে হঠাৎ, ব্যবসায়ী মহলে আবার একটু শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে অথবা কারো আশার প্রদীপ জ্বলে উঠছে; যদি আবার হাওয়া ভবন খুলতে পারে তাহলে কী সুবিধা পাবে!’
তিনি বলেন, ‘১৪টা বছর আমরা সরকারে, আমি জানি না ব্যবসায়ীরা এটা উপলব্ধি করে কি? করে না? এত নিশ্চিন্তে ব্যবসা করার সুযোগ তো আর পান নাই। ’
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই এনার্জি ক্রাইসিসে বাংলাদেশ একা নয়, পৃথিবীর সব দেশই কিন্তু ভুগছে। ’
তিনি বলেন, ‘ক্রাইসিস তো বাংলাদেশের না, ক্রাইস তো ইন্টারন্যাশনাল; এটা মাথায় রাখতে হবে। আজকে যেসব জায়গা থেকে আমরা সার, গম, খাবার পণ্য আনি সব জায়গায় সমস্যা। ’
মেগা প্রজেক্ট এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সরকারের সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ, সমালোচনা মেগা প্রজেক্ট, তারপর বিদ্যুৎ নিয়ে সমালোচনা, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট কেন আনলাম সেটা নিয়ে সমালোচনা। সেখানে নাকি টাকা মেরেই খেয়ে দিলাম। যারা ওরকম টাকা খেয়ে অভ্যস্ত টাকা খাওয়ার বিষয়টা বোঝে ভালো। কিন্তু আমরা যদি তখন এটা না আনি বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারতাম না। আমরা বলেছিলাম বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে দেবো, আমরা দিয়েছি। কিন্তু এখন যে ক্রাইসিস, সেটা তো বাংলাদেশের না, এটা তো ইন্টারন্যাশনালি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবাই এই ক্রাইসিসে ভুগছে। ’
ব্রাজিল থেকে সয়াবিন ও চিনি আমদানি করার চেষ্টার কথা জানান সরকারপ্রধান।
দুর্ভিক্ষ আসতে পারে এমন বক্তব্যের সমালোচকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিন্তু আগাম কিছু কিছু কথা বলিÍঅনেকে মনে করেন আমি কেন বলি? কই থেকে বলি? এটা হচ্ছে আমার একটা ধারণা অর্থাৎ দীর্ঘদিনের একটা অভিজ্ঞতা। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধটা হলো সারা বিশ্বে এটার অর্থনৈতিক ধাক্কাটা আসলো। শুধু আমাদের ওপর না পুরো ইউরোপ, আমেরিকা, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে ডেভেলপ কান্ট্রি ওপরে এর প্রভাব আরও ব্যাপকভাবে পড়লো। তখন আমি বললাম যে, আগামীতে একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থা হতে পারে। এখন তো সবাই সে কথাই বলছে, কালকে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী গতকালকে তার বক্তব্যে এ কথাটাই বলেছেন, বলছেন যে, বিরাট ক্রাইসিস সামনে। এটা যে শুধু আমরা বলছি, তা নয়। ’
টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি যেটা আশঙ্কা করি আমি পাবলিকের কাছে সরাসরি বলি। আমার এখানে লুকানোর কিছু নেই। জনগণ ভোট দিছে ক্ষমতায় আছি, না দিলে থাকবো না। কিন্তু জনগণের জন্যই তো কাজ করতে এসেছি। ’
গণভবনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংকরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামান প্রমুখ।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, আওয়ামী লীগের শিল্পও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমানসহ টিকে গ্রুপ, সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড, এস. আলম গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এসিআই লিমিটেড, আকিজ গ্রুপের প্রতিনিধিরা।