রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনার প্রশ্ন ॥ এতিম কই, ঠিকানা কোথায় কয়জন, এতিম আছে

50

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজশাহীতে জনসভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, আমরা এখানে দিতে এসেছি। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে এসেছি।’
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় পৌঁছে ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বিএনপি মানুষের কল্যাণ করতে পারে না, লুটপাট করে খেতে পারে। আপনারা জানেন, আজকে বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হয়েছেন। সেই ’৯১ সালে এতিমখানা তৈরি করবে বলে বিদেশ থেকে টাকা এনেছেন। কিন্তু এতিমখানা কই? কেউ এতিমখানার ঠিকানা জানে না।’
তিনি বলেন, ‘লুট করা, চুরি করা এটাই তাদের (বিএনপি) চরিত্র। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল পাঁচ বার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমেরিকার ফেডারেল কোর্ট তার (খালেদা জিয়া) ছেলে যে টাকা চুরি করেছে, ঘুষ খেয়েছে, সেই কথা তারাই বলেছে। সিঙ্গাপুর কোর্ট সেই একই কথা বলেছেন, তার আরেক ছেলের দুর্নীতির কথা। এই দেশের টাকা জনগণের কাজে লাগে নাই। বিদেশে পাচার করেছে, সেই পাচার করা টাকা আমরা ফেরত এনেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বিএনপির নেতারা আন্দোলন করেন। কিসের আন্দোলন? টাকা চুরি করে তাদের নেত্রী জেলে গেছেন। আন্দোলন চোরের জন্য। এতিমের টাকা চুরি করে খাওয়া আমাদের কোরান শরিফেও নিষেধ করা আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত টাকাই দিই না কেন এরা (বিএনপি) উন্নয়ন করতে পারে না। কারণ, এদের মন থাকে লুটপাটের দিকে। এদের মাথায় পচন। এদের নেতাই যদি এতিমের টাকা মেরে খান, তার সাঙ্গপাঙ্গরা কি খেতে পারে? আপনারাই বিচার করে দেখেন। আপনারাই ভেবে দেখেন।’
জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নৌকা আপনাদের মার্কা, নৌকা জনগণের মার্কা। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের থাকতে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের যে সংবিধান হয়েছিল, সেখানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিয়েছিল। একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। শহীদ মিনার নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন সরকারের আসে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস জাতিসংঘে স্বীকৃতি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ এই দেশের স্বাধীনতা এনেছে। এই দেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই স্বাধীনতা পেয়েছে। স্বাধীনতা পেয়েছে বলেই আজকে উন্নয়ন হচ্ছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মাকে হত্যা করা হলো। আমার মায়ের কী দোষ ছিল, আমি জানি না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ভাই কামাল, জামাল, ছোট রাসেলকে হত্যা করা হয়েছিল। আমার একমাত্র চাচাকে হত্যা করেছে। একই দিনে আমার মেজো ফুপু, ছোট ফুপুর বাড়িতে তারা আক্রমণ করে আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। পিতা, মাতা, ভাই হারিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে এসেছি। সব বেদনা, দুঃখ-কষ্ট বুকে নিয়েও সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি।
রাজশাহীতে জনসভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই নুহ নবীর (সা.) আমল থেকে বিপদে রক্ষা করেছে নৌকা। আর এই নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, এই নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে।’ নৌকায় ভোট দিতে জনসভায় যোগ দেওয়া জনতার প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘঠিত বিভিন্ন নেতিবাচক ঘটনার চিত্র তুলে ধরনে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আপনাদের দিয়েছিল শুধু লাশ উপহার। সৃষ্টি করেছিল বিধবা ও পিতাহারা সন্তান। শিবির-ক্যাডাররা হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছিল। এই বাংলা ভাইয়ের হাতে আব্দুল কাইয়ুম বাদশাকে মেরে গাছের সাথে উল্টো ঝুলিয়ে রেখেছিল। বিএনপি-জামায়াত আমলে এই এলাকা ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাইদের অভয়ারণ্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন, আন্দোলনের নামে ওই খালেদা জিয়ার হুকুমে পেট্রোল বোমা মেরে চলন্ত বাসে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ৫০০ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। তিন হাজার মানুষ আহত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।এটাই বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন। মানুষকে খুন করা-এটাই তাদের কাজ।’
তিনি বলেন, ‘আমার এখানে প্রশ্ন, এতিমখানার ঠিকানা কোথায়? সেই ঠিকানা দিতে পারে নাই। সেখানে কয়জন এতিম আছে?’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটা ট্রাস্ট ফান্ড করেছি। প্রায় আঠরোশ’ শিক্ষার্থী এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত এবং আওয়ামী লীগের দুঃস্থ নেতাকর্মীদের আমরা সাহায্য দিয়ে থাকি। ওই কেয়ারটেকার সরকার তন্নতন্ন করে খুঁজেছে, কোনও অনিয়ম পায় কিনা, আমাকে কোনোভাবে মামলায় ফাঁসাতে পারে কিনা। এতটুকু অনিয়ম তারা সেখানে পায় নাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষকে পুড়িয়ে যারা হত্যা করতে পারে, তারা দেশের জন্য কি কল্যাণ করতে পারে? তারা বিদ্যুৎ দিতে পারে নাই, দিয়েছিল কী? খাম্বা।’
তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালে যখন জিয়া মারা গেলেন তখন বললো, জিয়া পরিবারের কিছু নাই। আছে ভাঙা স্যুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জি। আজকে শত শত কোটি টাকার মালিক। এখন অনেক টাকা, বিদেশেও মানি লন্ডারিং করে, বিদেশেও পাচার করে। কোকো-১, কোকো-২ করে কোকো-৬ পর্যন্ত লঞ্চ। ড্যান্ডি ডাইয়িং ইন্ড্রাস্ট্রি, আরও কত কিছু তারা করেছে। ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে, তা পর্যন্ত শোধ দেয় নাই।’
বক্তব্যের শুরুতেই একবার জিজ্ঞেস করেন, ‘আজান দিচ্ছে?’ তখন প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে থাকা নেতাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে আবারও বক্তব্য শুরু করেন। পরে নিজেই যখন আজান শুনতে পান তখন বলেন,‘আজান হচ্ছে, আমি আজানের পরেই বক্তব্য শুরু করছি।’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভা পরিচালনা করেন মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মো. আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।