কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে সেরামের ২১ লাখ টিকা আসছে। এরমধ্যে এক লাখ থাকবে কোভ্যাক্সের টিকা। আর ২০ লাখ দেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের (অক্সফোর্ড-এ্যাস্টজেনেকা) টিকা। কোভ্যাক্সের টিকাও সেরামেই উৎপাদিত হয়ে থাকে। এই প্রাপ্তির আশ্বাসের পরও আপাতত আজ সোমবার থেকে প্রথম ডোজের টিকাকরণ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ভ্যাকসিন স্বল্পতার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রবিবার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব লাইন ডিরেক্টর ডাঃ মোঃ শামসুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে সব জেলার সিভিল সার্জন, সিটি কর্পোরেশন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আগামীকাল থেকে টিকাদান কর্মসূচী বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামীকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমের প্রথম ডোজের টিকাদান সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ শামসুল হক আরও বলেন, ভ্যাকসিন স্বল্পতার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, টিকাদান কর্মসূচী অব্যাহত রাখতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসকে যত দ্রুত সম্ভব অন্তত ২১ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করতে বলা হয়েছে।
করোনার টিকার অপ্রতুলতার মধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে পৌঁছাবে আরও ২১ লাখ ডোজ টিকা। সবগুলো টিকাই উৎপাদিত ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের। এতে কিছুটা হলেও জনমনে স্বস্তি ফিরেছে।
রবিবার টিকা নিয়ে সার্বিক তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ২১ লাখ টিকা আসছে। ১ লাখ কোভ্যাক্স দেবে। আর ২০ লাখ দেবে সিরাম ইনস্টিটিউট। বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে করোনা টিকা বণ্টনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে কোভ্যাক্স ফ্লাটফর্ম। বাংলাদেশে কোভ্যাক্স টিকা পাঠাবে ভারতের সিরাম থেকেই। ২১ লাখ টিকায় গণটিকাদানের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে বলে জানান খুরশীদ আলম।
টিকার চাহিদা মেটাতে চীনের উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড টিকাও নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা প্রয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে করোনা বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি।
এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধী পাঁচটি ব্র্যান্ডের টিকার প্রয়োগ চলছে বিশ্বজুড়ে। এরমধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্না, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা, রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি ও চীনের সিনোভ্যাক।
বাংলাদেশে চলছে অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রয়োগ, যা কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ সরকার, যা ধাপে ধাপে দেশে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু দুই ধাপে কেনা টিকার ৭০ লাখ ডোজ টিকা আসলেও বাকি টিকা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় অনিশ্চয়তা। কেননা ভারতেই অভ্যন্তরীণ টিকার চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সিরাম।
এর আগে বাংলাদেশী ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোকে সঙ্গে নিয়ে গত ৫ নবেম্বর সিরামের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে সরকার। চুক্তি অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। চুক্তি অনুসারে প্রতিমাসে বাংলাদেশে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর কথা সিরামের। এভাবে ছয় মাসে ৩ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা। জানুয়ারিতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ টিকা আসলেও ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে টিকা আসে ২০ লাখ ডোজ। এর মধ্যে অবশ্য ভারত সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ৩২ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারের হাতে এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা। মার্চ চলে যাওয়ার পর এপ্রিলও শেষের পথে। কিন্তু কোন টিকা পাঠাচ্ছে না সিরাম। ভারতের অভ্যন্তরীণ টিকার চাহিদাও ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের বাকি টিকা পাওয়া নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কোভ্যাক্স প্রত্যেক দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করার কথা। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে সেখান থেকে টিকা পাওয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকেও আসছে না।
শুরুতে কোভ্যাক্স থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশকে দেয়া হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের উদ্ভাবিত টিকা। সংরক্ষণ প্রক্রিয়া অনেকটা দুঃসাধ্য জেনেও এই টিকা নিতে আগ্রহ দেখায় সরকার। পরে জানানো হয়, ফাইজারের নয়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে কোভিশিল্ড নামে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই দেবে কোভ্যাক্স।