এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ॥ একটি পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ হচ্ছে

38

কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত দশটি বহু নির্বাচনি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস যাচাই-বাছাই কমিটি’ শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাতিলের সুপারিশ করবে। তবে কোন বিষয়ের পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হবে সে বিষয়ে কমিটি স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। আর পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সবগুলো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর।
অন্যদিকে, রচনামূলক কোনও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠেনি। ফলে কমিটির বক্তব্য অনুযায়ী এমসিকিউ’র একটি পরীক্ষা বাতিল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও কমিটির সুপারিশ বিবেচনা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় ও পরীক্ষা যাচাই-বাছাই কমিটির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের বহু নির্বাচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেট পরীক্ষার প্রশ্ন ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। পরীক্ষা শুরুর একঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে ফাঁস হয় প্রশ্নপত্র। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ৩ মিনিটে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বহু নির্বাচনি পরীক্ষার ‘খ’ সেটের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরুর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে সকাল ৮টা ৪ মিনিটে ইংরেজি প্রথম পত্রের ‘ক’ সেটের প্রশ্ন ফাঁস হয়।
একইভাবে ৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৪৮ মিনিট আগে সকাল ৯টা ১২ মিনিটে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ‘খ’ সেটের গাঁদা প্রশ্নপত্রটি হোয়াটস অ্যাপের একটি গ্রুপে পাওয়া গেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে হোয়াটস অ্যাপের একটি গ্রুপে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বহু নির্বাচনি অভীক্ষার ‘খ’ সেটের চাঁপা প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে হোয়াটস অ্যাপের একটি গ্রুপে গণিতের ‘খ-চাঁপা’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে হোয়াটস অ্যাপের একটি গ্রুপে আইসিটির ‘ক’ সেট প্রশ্ন পাওয়া যায় এবং সকাল ৯টা ৩ মিনিটে ‘গ’ সেটের প্রশ্নও ফাঁস হয়।
এছাড়া গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিজ্ঞান বিভাগের ‘পদার্থবিজ্ঞান’, মানবিক বিভাগের ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ এবং বাণিজ্য বিভাগের ‘ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং’। এদিন সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে পদার্থবিজ্ঞানের বহু নির্বাচনি অভীক্ষার ‘গ সেট’ এর প্রশ্ন উত্তরপত্রসহ হোয়াটস অ্যাপে পাওয়া গেছে। আর পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পরেই সকাল ১০টা ৫ মিনিটে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং-এর ‘ঘ’ সেট’র প্রশ্নপত্রও পাওয়া যায় হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে। ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত রসায়ন, পৌরনীতি ও নাগরিকতা এবং ব্যবসায় উদ্যোগের মধ্যে শুধু রসায়নের প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় পরীক্ষার আগে। সকাল ৯টা ৫ মিনিটে রসায়নের ‘খ’ সেট প্রশ্নপত্রটি হোয়াটস অ্যাপের গ্রুপে পাওয়া যায়। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে ৯ টা ৫ মিনিটে পাওয়া যায় হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে।
আজ রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও সঙ্গীত বিষয়ের পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হয় বেলা পৌনে একটায়। এ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র কৃষি শিক্ষার ‘ক’ সেট প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পরে। আবার দুপুর ২টা থেকে শুরু হয় আরবি, সংস্কৃত, পালি, কর্মমুখী শিক্ষা, কম্পিউটার শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া, বেসিক ট্রেড, চারু ও কারুকলা বিষয়ের পরীক্ষা। এসব পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই চিত্রে দেখা গেছে, চলমান পরীক্ষা এক ঘণ্টার বেশি সময় আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে চারটি পরীক্ষার। পরীক্ষার অধাঘণ্টার বেশি সময় আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে আরও চারটি পরীক্ষার। এছাড়া আধঘণ্টা বা তার কম সময়ে পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত ফাঁস হয়েছে আরও দু’টি পরীক্ষার।
মন্ত্রণালয় ও যাচাই-বাছাই কমিটির বক্তব্য অনুযায়ী পরীক্ষার অন্তত এক ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস না হলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে না। এছাড়াও পরীক্ষার এক ঘণ্টা তার বেশি আগেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও যদি বেশি সংখ্যাক পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাহলে বাতিলের সুপারিশ করবে না কমিটি। শিক্ষার্থীদের বেশি ক্ষতি না হলে মন্ত্রণালয়ও পরীক্ষা বাতিলের দিকে যাবে না।
চলমান এসসিসি ও সমমান পরীক্ষার আগেই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন জানিয়েছিলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে প্রমাণ পেলে ওই পরীক্ষা বাতিল করা হবে। পরীক্ষার দিনেও এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। পরীক্ষা শুরুর প্রথমদিনই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটলে কড়াকড়ি আরোপ করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেও প্রশ্নঁফাস হয়। এভাবে টানা ছয় দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তারপরেও প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যায়নি। অবশেষে এমসিকিউ তুলে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী বছর থেকে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে ভিন্ন কৌশল নেওয়ার কথাও জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
প্রশ্নপত্র ফাঁস অব্যাহত থাকায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয় মনিটরিং এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কমিটি গঠনের কথা জানান। প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটি গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠক করে। রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দ্বিতীয় বৈঠক শেষে কমিটির প্রধান জানান, একটি পুরো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। অন্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আংশিক ফাঁস হয়েছে। একটি পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হবে।
অন্য পরীক্ষাগুলো বাতিলের সুপারিশ না করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে কমিটির প্রধান জানান, পরীক্ষার যে অংশের প্রশ্নপত্র পুরো ফাঁস হয়েছে সেটা বাতিল করার সুপারিশ করা হবে। এখন পর্যন্ত কমিটি একটি মাত্র প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছে। বহু নির্বাচনি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে রচনামূলক প্রশ্নপত্রে নেওয়া পরীক্ষা বাতিল হবে না। এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও কি পরিমাণ পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।