যানজট নিরসনে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা একটি ভিন্ন রেল যোগাযোগের সাক্ষী হবে -প্রধানমন্ত্রী

14
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপপুর, শশীদল ও জয়দেবপুর প্রান্তে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩টি প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ৬৯.২০ তি. মি. রেলপথ রূপপুরের শশীদল এবং জয়দেবপুর ষ্টেশন হতে যুগপৎভাবে ট্রেন চলাচল সবুজ পতাকা উড়িয়ে ও হুইলসেল বাজিয়ে উদ্বোধন করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রেল যোগাযোগের সম্প্রসারণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, যানজট নিরসনে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী একটি ভিন্ন রেল যোগাযোগের সাক্ষী হবে।
বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিন প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ৬৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার রেলপথে রূপপুর, শশীদল এবং জয়দেবপুর স্পেশন থেকে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে তিনটি রেলস্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সবুজ পতাকা নেড়ে, বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এই ঢাকা শহরেই রেল যোগযোগের একটা আলাদা পরিবেশ তৈরি হবে। যেটা মানুষের যোগাযোগ যাতায়াত এবং আমাদের তেলের খরচ-অনেক কিছুই বাঁচবে। ঢাকা শহর যানজটও মুক্ত হবে। সেভাবেই আমরা আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছি। যেটা পরবর্তীতে উত্তরা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে আমরা পাতালেও যাচ্ছি। এমআরটি লাইন-১ এর অধীনে পাতাল রেলের নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, রেল খাতে সকল প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নব-দিগন্তের সূচনা হবে এবং রেল পরিসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণে নেওয়া কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প তাঁর সরকার বাস্তবায়ন করছে। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে যশোরের রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য দুটি ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু, খুলনা-মোংলা ব্রডগেজ রেললাইন, আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন নির্মাণ, ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা বন্দর রেললাইন, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন, খুলনা-দর্শনা ডুয়েলগেজ ডাবললাইন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ করছে। এছাড়া, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র রেল-লিংক, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন, ধীরাশ্রম আইসিডি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার নতুন নতুনভাবে রেললাইন করে যাচ্ছে যেন সারা দেশে একটি রেল যোগাযোগের নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে তাঁর সরকার ৬৫০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ, ২৮০ কিলোমিটার মিটারগেজকে ডুয়ালগেজে রূপান্তর এবং ১ হাজার ২৯৭ কিলোমিটার লাইন পুনর্বাসন-পুনঃনির্মাণ করেছে। ১২৬ নতুন স্টেশন ভবন ও ২২৩টি স্টেশন ভবন পুনর্বাসন-পুনঃনির্মাণ করেছে। পাশাপাশি ৭৩২টি নতুন রেলসেতু, ৭৭৪টি রেলসেতু পুনর্বাসন-পুনঃনির্মাণ এবং ৫০টি ব্রডগেজ ও ৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ১০৬টি লোকোমোটিভ, ২০ সেট ডিইএমইউ, ৫৩৫টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ এবং ৫১৬টি মালবাহী ওয়াগন সংগ্রহ করেছি। ১৩০টি স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করেছি। ইতোমধ্যে ৪৪টি নতুন এবং বর্ধিত রুটে মিতালী এক্সপ্রেসসহ মোট ১৪২টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেলপথ সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির। আরও বক্তব্য রাখেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ড. বিনয় জর্জ।