বিশ্বনাথে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশত

21

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ থেকে :
বিশ্বনাথে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য সুহেল আহমদ চৌধুরী এবং ভাইস চেয়ারম্যান (Photo-5), Biswanath, Sylhet, 26.11.15ও সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য আহমেদ নূর উদ্দিন পক্ষের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীসহ উভয় পক্ষে অন্তত ৫০জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত স্থানীয় বাসীয়া ব্রিজের উপর দু’পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে চেয়ারম্যান পক্ষের আব্দুল হক ও নিজাম উদ্দিনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিনের হামলায় গুরুতর আহত হন উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী। পূর্ব বিরোধ ও সরকারি বরাদ্দ ভাগাভাগি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে সমন্বয় সভা চলাকালে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীর উপর হামলা করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল আড়াইটায় পূর্ব নির্ধারিত মাসিক সমন্বয় সভায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের সরকারি বরাদ্দ নিয়ে বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আহমেদ নূর উদ্দিন। ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সুহেল আহমদ চৌধুরী। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নিয়ে প্রথমে দুই চেয়ারম্যানের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এরই জের ধরে অনুসারীসহ ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিন উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীর উপর হামলা করেন।MAR
এ ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুল হক, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমীন, ওসি রফিকুল হোসেনের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যান কার্যালয়ে আহত চেয়ারম্যান সুহেল চৌধুরীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালে চেয়ারম্যানের নিজ গ্রাম উপজেলা সদরের কারিকোনায় মাইকিং করা হলে চেয়ারম্যান কার্যালয়ের সামনে বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান অনুসারীরা ও গ্রামের লোকজন জড়ো হতে থাকেন। চিকিৎসা শেষে চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীকে নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিন ও তার গ্রাম উপজেলা সদরের জানাইয়াকে কটাক্ক করে মিছিল বের করা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল চৌধুরীকে নিয়ে মিছিলটি তার কার্যালয়ের সামন থেকে বের হয়ে নতুন বাজারের রামপাশা ষ্ট্যান্ডে গোল চত্তরে গিয়ে প্রতিবাদ সভায় মিলতি হয়।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী। বক্তব্যে তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে ইউএনওসহ সরকারি কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সামনে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিন। এসময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া চেয়ারম্যান, যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল হাই, মুক্তিযুদ্ধা দলের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক।
এদিকে প্রতিবাদ সভা শেষে আবারও ভাইস চেয়ারম্যান ও তার গ্রাম জানাইয়ার বিরোদ্ধে মিছিলসহকারে পুরনো বাজারের দিকে রোওয়ানা দেন চেয়ারম্যান পক্ষ। এ সময় জানাইয়া গ্রামবাসী মাইকিং করে গ্রামের লোকজন উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে এলে দু’ই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ইটপাটকেলের আঘাতে এ সময় উভয় পক্ষে অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হন। সংঘর্ষে আব্দুল হক (৩৫), নিজাম উদ্দিন (৩০), ময়না মিয়া (৫০), জুানই মিয়া (৩৫), শাহীন আহমদ (২৫), জসিম উদ্দিন (২৪), জিতু মিয়া (৩০), লিটন মিয়া (২২), সমর আলী (৩১), জুনাব আলীসহ (৩৫)  উভয় পক্ষে প্রায় ৫০জন আহত হয়েছেন। বাকি আহতদের নাম জানা যায়নি। অবশেষে সংঘর্ষ থামাতে ১১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে থানা পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘাত সংঘর্ষ এড়াতে উপজেলা সদরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ নূর উদ্দিন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান তার নিজ বাড়ির রাস্তা সরকারি বরাদ্দের টাকা দিয়ে পাকা করেছেন, কিন্তু নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের কোন বরাদ্দ কখনই তিনি দিতে চাননি।
এ ব্যাপারে জানাইয়া গ্রামের ইউপি সদস্য নুরুল হক বলেন, অপরাধী হলে ভাইস চেয়ারম্যান হতে পারেন কিন্তু জানাইয়া গ্রামবাসীতো উপজেলা চেয়ারম্যানকে হামলা করেনি। জানাইয়া গ্রামকে নিয়ে কটুক্তি করায় গ্রামের লোকজন এ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করে থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি রফিকুল হোসেন বলেন, সংঘর্ষ থামাতে ১১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোঁড়া হয়। ফের সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।