কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে কে পাচ্ছেন নৌকা ?

298

শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
আসন্ন পৌরসভার নির্বাচনে শুধু মেয়র পদে রাজনৈতিক দলের প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।  এবং কাউন্সিলরসহ অন্য পদে আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন হবে- এই বিধান রেখে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধনী) বিল-২০১৫’। পাস হওয়া বিল অনুযায়ী মেয়র ছাড়া কাউন্সিলরসহ অন্য প্রার্থীদের আগের মতোই নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীক বরাদ্দ নিতে হবে। আসন্ন পৌর নির্বাচনের মাঠে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের কার্যক্রম দৃশ্যমান। মৌলভীবাজার জেলায় রাজনীতি সচেতন উপজেলা হিসেবে পরিচিত কুলাউড়া। আসন্ন কুলাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক? এমন প্রশ্ন, জল্পনা, আলাপ, আলোচনা এখন সর্বত্র। শুধু আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীই নন এমন সরব আলোচনা পৌরসভার আপমর জনতার। যত দিন যাচ্ছে এ নিয়ে কৌতুহলের মাত্রা যেন বেড়ই চলছে। এই কৌতুহলী আলাপ আলোচনা পৌরসভার গন্ডি পেরিয়ে কুলাউড়া উপজেলার সর্বত্র, এমনকি পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তা বি¯তৃত। শহর থেকে গ্রামে, হোটেল রেস্তুরায়, পাড়া মহল্লা সর্বত্র এখন একটাই আলোচনা কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক? প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আমলনামা, যোগ্যতার চুলচেড়া বিশ্লেষণ ছাড়াও কে পারিবারিকভাবে আওয়ামীলীগ, কে অন্য দল থেকে আগত, পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা কি না, গত নির্বাচনে কে কত ভোট পেয়েছিলেন, কার শিক্ষাগত যোগ্যতা কত, পৌরবাসীর কাছে কার গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু ইত্যাদি নানা বিষয় এসব আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। তবে আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীর জোড়ালো দাবী বিগত নির্বাচনে পরপর ২ বার পরাজিত এই আসন পুনরুদ্ধার করা যায় এমন একজন যোগ্য প্রার্থীকে যাতে মনোনয়ন দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বি গ্রেডের পৌরসভার আসন্ন এই নির্বাচনে বিএনপির একজন প্রার্থী (বর্তমান মেয়র) হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের দাবী পৌরবাসীর চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে যাতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রদান করা হয়। অনেকেই মনে করেন আওয়ামীলীগের একাধিক ও বিএনপির একক প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীক কে পাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করছে কুলাউড়া পৌরসভার আগামীদিনের পৌরপিতা নির্বাচিত হবার ভবিষ্যৎ।
সারাদেশের সকল পৌরসভায় আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে বিচরণ করলেও এসব প্রার্থীদের মধ্য থেকে আওয়ামীলীগ কোন প্রক্রিয়ায় একক প্রার্থী নির্বাচন করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আওয়ামীলীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে কোন প্রক্রিয়ায় প্রার্থী নির্বাচন করা হবে তা নিয়ে কাজ চলছে। সূত্র আরো জানায় দুটি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে আওয়ামীলীগের সংশ্লিষ্ট পৌর কমিটি অথবা আওয়মীলীগের পৌর ও থানা কমিটি প্রার্থী মনোনীত করবে। অপর প্রক্রিয়া হচ্ছে একটি বিভাগীয় সেল হবে, সেই সেলের প্রধান হবেন আওয়ামীলীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। উক্ত সেলে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা আওয়ামীলীগ, উপজেলা আওয়ামীলীগ, পৌর আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা সদস্য থাকবেন। আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এর যেকোন একটি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। এবং সেই প্রক্রিয়ায় প্রার্থী মনোনীত হবেন। তবে যে প্রক্রিয়ায়ই প্রার্থী মনোনীত হউক না কেন এই তালিকা কেন্দ্রে যাবে। সেখানে বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তালিকার সাথে এই তালিকা মিলিয়ে যাচাই করে চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে আওয়ামীলীগ।
মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, কুলাউড়া উপজেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহবায়ক, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ও মানবাধিকার কমিশনের উপজেলার সাধারণ সম্পাদক, সাপ্তাহিক কুলাউড়ার সংলাপের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের সিনিয়ির প্রভাষক সিপার উদ্দিন আহমদ। কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুলাউড়ার ডাক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক একেএম সফি আহমদ সলমান। কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শফিউল আলম শফি। উপজেলা আওয়ামীগের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব শফি আলম ইউনুস (মহালদার)।
আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের মধ্যে প্রভাষক সিপার উদ্দিন আহমদ পারিবারিকভাবে আওয়ামী রাজণীতির সাথে সম্পৃক্ত। পিতা হাজী আব্দুল বারী ছমরু মিয়া কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা ও কুলাউড়া পৌর আওয়ামীলীগের ৮ নং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি। ছোট বোন কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের প্রথম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তানিয়া আক্তার লিমা ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক। ছোট ভাই শাহীন আহমদ কুলাউড়া উপজেলা যুুবলীগের প্রচার সম্পাদক ও পৌর যুবলীগের আহবায়ক। কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক প্রভাষক সিপার উদ্দিন আহমদ আওয়ামী ঘরনায় রাজনৈতিক যাত্রা শুরু শেখ রাসেল শিশু কিশোর সংগঠনের কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে। শফিউল আলম শফি দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী কুলাউড়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি নির্বাচন করে পরাজিত হন। সফি আহমদ সলমান জাসদ থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করে উপজেলা আওয়ামীলীগের গত কাউন্সিলে যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পান। তিনি কাদিপুর ইউনিয়নের ৩ বারের নির্বাচিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শফি আলম ইউনুস গত পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তিনিও নির্বাচনে পরাজিত হন।