ডায়াবেটিস দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা ॥ ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে

49

নীরব মহামারী ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে ডায়াবেটিস। বাংলাদেশে ৬% লোক এ যাবৎ এ রোগে আক্রান্ত For Pressহয়েছে। প্রতি বছর দ্বিগুণ হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ কোটিতে পৌঁছবে। ‘সকল রোগের জননী’ খ্যাত ডায়াবেটিস নীরব মহামারী ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। বাংলাদেশে ধনী-গরিব নির্বিশেষে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সিলেট ডায়াবেটিক হাসপাতালে প্রতিদিন নতুন ডায়াবেটিকের রোগী রেজিস্ট্রেশন করছেন আনুমানিক ১৮০জন থেকে ২০০ জন। ডায়াবেটিসের এমন চিত্র সামনে রেখে গতকাল ১৪ নভেম্বর বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ স্বাস্থ্যসম্মত খাবারই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যশিক্ষাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্তের হার বেশি। বর্তমানে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। দেশে বর্তমানে প্রায় ৮৫ লাখ ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে। ২০৩০ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নানা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পরও দেশের ৮৫ লাখ ডায়াবেটিস রোগীর মাত্র ২৫ ভাগ রোগীকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে পেরেছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। চিকিৎসকরা জানান, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। সব বয়সের মানুষই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, স্থূলতা, হাঁটা-চলার অভাব এবং মন্দ খাদ্যাভ্যাসই দায়ী। জানা গেছে, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগটি দুই ধরনের হয়ে থাকে। টাইপ-১ এবং টাইপ-২। জন্ম গত ও পরিবেশগত কিছু কারণে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের প্রকোপ দেখা যায়। সাধারণত অল্পবয়সীরা এতে আক্রান্ত হয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিস শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি প্রতিরোধযোগ্য। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতির উন্নয়ন এবং শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানোর মাধ্যমে শতকরা ৬৫-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে ‘টাইপ-২’ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য দরকার সচেতনতা। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে শুধু নিজে সচেতন হলেই চলবে না, অন্যকেও সচেতন করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা না বাড়ালে এ রোগের কারণে কিডনি, চোখ, হৃৎপিন্ড এবং পাসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ব বরণ ছাড়াও অকালে মৃত্যুবরণ করছে অনেকে। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গণসচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি। আর সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। রোগটি প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। ডায়াবেটিস নিয়েন্ত্রনে ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
গতকাল বেলা ১২টায় সিলেট ডায়াবেটিক সমিতি’র সভাক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সিলেট ডায়াবেটিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ লোলিত মোহন নাথ এর পরিচালনায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য আফতাব চৌধুরী। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ এ.জেড. মাহবুব আহমদ। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট ডায়াবেটিক সমিতির নির্বাহী পর্ষদের সম্মানিত সদস্য, বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ সুজাত আলী, হাসপাতালের পুষ্টিবিদ হৈমন্তি সরকার, ডাঃ এ.কে.এম. জিয়াউল হক, আলী আকবর প্রমূখ। বক্তারা ডায়াবেটিস রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। Diabetics Day Pic
এদিকে, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফার্মাকোলজির প্রফেসর ও প্রিন্সিপাল ইনচার্জ ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসাইন বলেছেন, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়। সচেতনতার অভাবে ঝরে যেতে পারে অনেক জীবন। তাই সকল ডায়াবেটিস রোগীর উচিত নিয়ম-কানুন মেনে চলা।
গতকাল শনিবার সকালে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে এমএজি ওসমানী হাসপাতালে সেমিনার ও পদযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নভো নরডিক্স ফার্মা (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় ও সিলেট ওসমানী হাসপাতালের এনড্রোকাইন ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে হাসপাতালের হলরুমে সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় প্রধান সহকারি অধ্যাপক ডা. মো. শাহ এমরান, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ এফ এম নাজমুল ইসলাম, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এম এ সালাম, নভো নরডিক্স ফার্মা’র বিভাগীয় সেলস ম্যানেজার নুরুজ্জামান চৌধুরী, মো. রাব্বানী, আসিফ আহমদ, মো. শাহজাহান প্রমুখ।
সেমিনার শেষে একটি পদযাত্রা হাসপাতাল থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়। বিজ্ঞপ্তি