রাজনীতি নিয়ে নতুন শঙ্কা!

24

Bangladesh Electionকাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের তিন সিটি নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীলতার প্রত্যাশা করেছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে ব্যাপক কারচুপি-অনিয়মের অভিযোগ এনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বয়কট করার ফলে নতুন করে শঙ্কার মুখে পড়েছে রাজনীতি। এর ফলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও ফিকে হয়ে গেল।
গত বছরের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন বয়কটের পর বিএনপি চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা কয়েক মাস অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল ডাকে। এ সময় পেট্রোল বোমায় নিহত হন শতাধিক সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বেশ কয়েকজন নিহত হন। যার ফলে দেশে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার ঘোষণায় সাধারণ মানুষ রাজনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। এরকম পরিস্থিতির পর তাদের প্রত্যাশা ছিল একটাই সেটা হল- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
গতকাল মঙ্গলবার তিন সিটিতে ভোট গ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টা পর প্রথমে চট্টগ্রাম, এর এক ঘণ্টা পর ঢাকায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
দুপুর ১২টার পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের এ ঘোষণা দেন। এ সময় ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ও উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আওয়াল উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ভোটবিহীন এ নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান-বর্জন করছি। এটা কোনো নির্বাচন হয়নি। এটাকে নির্বাচন বলা যাবে না। এটা গণতন্ত্রের প্রহসন।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে চট্টগ্রামের দেওয়ানহাটে নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একই অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম। একই সঙ্গে রাজনীতি আর না করার ঘোষণাও দেন তিনি।
গত পাঁচ বছর চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন মঞ্জুর। বিএনপির সমর্থনে এবারও মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি।
এদিকে নানা অভিযোগে বিএনপির ভোট বর্জনের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, জনমত পক্ষে নেই বুঝতে পেরেই ভোটের লড়াই থেকে সরে গেছেন তারা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট আবারো যদি সহিংস আন্দোলন শুরু করে তবে এর যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন সাবেক এই মন্ত্রী।
মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক ব্রিফিংয়ে একথা বলেন তিনি। নির্বাচনের আগেই বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে আবারো আন্দোলনের ডাক দেওয়া  হবে।
ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জনমত তাদের সঙ্গে নেই, তাই বিএনপি জোট নির্বাচন বয়কট করেছে।
তিনি বলেন, ৯০ দিনের সহিংসতার পর দেশের মানুষ এখন আর তাদের পাশে নেই। সেটা বুঝতে পেরেই তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, জনগণ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় নতুন ইস্যু তৈরির জন্যে খালেদা জিয়া এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
তবে নির্বাচনে অনিয়ম হলে ‘বরদাশত’ করা হবে না আগের দিনের এমন হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ মঙ্গলবার সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচনের সময় বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
তবে সাংবাদিকদের কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ বলেছেন, নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখবেন।
সিটি নির্বাচনের আগেই অবশ্য দেশের দুই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অবস্থান জানান দেন।
রবিবার ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘প্রতিহিংসার পথ’ ছেড়ে ‘সমঝোতায়’ আসার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, আমার শেষ কথা। আপনি বিনা ভোটে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। এই দম্ভ ত্যাগ করুন। মনে রাখবেন, সব দিন সমান যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভয় দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আপনি এখন ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পাচ্ছেন। ভয় পাবেন না। আমরা আপনার মতো প্রতিশোধপরায়ন নই। আপনি উগ্র স্বভাব ও জিঘাংসার মনোবৃত্তি বদলান। গণতন্ত্র ও সংলাপের পথে আসুন।
একই দিন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি তুলে ধরে খালেদা জিয়া যে তা ভঙ্গ করেছেন তা অবহিত করেন। একই সঙ্গে হরতাল-অবরোধে নাশকতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করেন।
এই নাশকতায় জড়িতদের বিচারে আলাদা কমিশন করা হবে কি-না সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন করেন, যারা আগুন দিয়েছে তাদের লাল কালি দিয়ে দেখিয়েছেন? আবার বিচার চান?
তিনি বলেন, নাশকতাকারী, তাদের নির্দেশদাতা ও অর্থ জোগানদাতাদের বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর। তাদের এমনভাবে শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ না করে।
খালেদা জিয়ার সংলাপের আহ্বান নাকচ করে শেখ হাসিনা বলেন, উনার (খালেদা) সমঝোতায় কে বিশ্বাস করবেন? তার কথা কেউ বিশ্বাস করেন না। উনি ধোঁকা দিয়ে মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। ওটাই বলে যাক।
এমন পরিস্থিতির পর দেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে তার জন্য এখন অপেক্ষার পালা।