২৫ দিনে দক্ষিণ সুরমায় ৩টি ডাকাতি, জনমনে আতংক

64

DSC_0116স্টাফ রিপোর্টার :
২৫ দিনে দক্ষিণ সুরমা এলাকায় দুই ব্যবসায়ী ও এক যুক্তরাজ্য প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হলেও এখন পর্যন্ত লুণ্ঠিত কোন মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তাছাড়া ডাকাতদল ডাকাতি সংঘটিত করে পুলিশের নাকের ডগার উপরদিয়ে বীরদর্পে লুণ্ঠিত মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন এসব ডাকাতির ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগিরা মনে করছেন, পুলিশের যোগসাজসে এসব ডাকাতি সংঘটিত হচ্ছে। তা না হলে এখন পর্যন্ত লুন্ঠিত মালামাল ও ডাকাত দলের কোন সদস্যকে গ্রেফতার করতে পারেনি কেন পুলিশ? এ দিকে গতকালও খোজারখলা এলাকার ব্যবসায়ীর বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার  ভোররাতে সাড়ে ৩ টার দিকে খোজারখলা সি ব্লকের ৩২৩ নং ব্যবসায়ী বিরাই মিয়ার বাড়িতে ৭/৮ জনের সশস্ত্র ডাকাতদল দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিরাই মিয়াসহ তার স্ত্রী নেহার বেগম (৫৫), মেয়ে সুলতানা পারভিন বিলকিস (৩২), ফারহানা বেগম (২০) ও ছেলে এমদাদ হোসেনের হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে। তখন কয়েকজন ডাকাত আলমিরা, সোকেস ও মহিলাদের পরিহিত থেকে প্রায় ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার, ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, দামী কিছু কাপড়-চোপড় ও মোবাইলসেট থেকে ৪টি সিমসহ ১৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতরা প্রায় দেড় ঘন্টা ডাকাতি সংঘটিত করেছে। গতকাল দুপুরে এমন খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জিত দাসসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ডাকাতদের সনাক্ত বা লুণ্ঠিত কোন মালামাল উদ্ধার করতে করতে পারছে না পুলিশ। দক্ষিণ সুরমার খোজারখলায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে এক দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতেরা ওই বাড়িতে হানা দিয়ে স্বর্ণ ও নগদ টাকাসহ ১৫ লাখ টাকার মাল লুট করেছে। শনিবার ভোর রাতে এ ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ফজরের নামাজের সময় বিরাই মিয়া ঘর থেকে বের হলে ডাকাতেরা হানা দেয়।’
এদিকে, পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি ইউনিয়নের গাঙ্গুয়া গ্রামের যুক্তরাজ্য থেকে আব্দুল জলিল বাড়িতে ১০/১২ জনের মুখোশধারী ডাকাতদল হানা দেয়। ডাকাতদল গেইটের তালা ভেঙ্গে এবং ঘরের লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে অস্ত্রেরমুখে বাড়ির ১৮ জন সদস্যকে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে ফেলে লুটপাট চালায়। এ সময় ডাকাতরা প্রবাসীর ঘরে থাকা ৩৫ ভরি স্বর্ণালংকার, ৪ হাজার পাউন্ড, ৭টি দামী মোবাইল সেট ও নগদ ৩ লাখ টাকা, ৫০ হাজার টাকা দামী কাপড়-চোপড়সহ প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতির শিকার প্রবাসী আব্দুল জলিল জানান, ডাকাতরা আলমারি ও শো-কেসের তালা ভেঙ্গে ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৪ হাজার পাউন্ড, নগদ ৩ লাখ টাকা, ৬টি দামী মোবাইল ও ১টি আইফোন এবং পঞ্চাশ হাজার টাকার কাপড়-চোপড়সহ মোট ৩০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। আব্দুল জলিল জানান, ডাকাতরা প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী ঘরে লুটপাট চালায়। তিনি জানান, আগামী ১৫ এপ্রিল তার পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্য ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। খবর পেয়ে পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দক্ষিণ সুরমা থানার এসি-ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
অপরদিকে, ১৮ এপ্রিল শনিবার রাত ২ টার দিকে তেলীবাজার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আলফু মিয়ার বাড়িতে মুখোশধারী ডাকাতরা হানা দেয়। এ সময় ডাকাতরা ইউপি সদস্য আব্দুল মুমিন আলফু মিয়া (৭০), স্ত্রী রিনা বেগম (৫০), ছেলে রুবেল আহমদ, (২৫) কাইয়ুম (৩২) রাইয়ুম (২৮) মাছুম আহমদ (২০) আহত করে স্বর্ণালংকারসহ ৬ সদস্যকে ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার বিক্রিকৃত জমির ৫ লাখ টাকা শুক্রবার বিকালে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তার ভাই মতিন মিয়ার ঘরেও নগদ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিলো। রাত ১টার দিকে ১০/১২ জনের একদল ডাকাত আলফু মিয়ার বাড়িতে হানা দেয়। প্রথমে ঘরে প্রবেশের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু দরজা না খোলায় ডাকাতরা দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। সাথে সাথে বেঁেধ ফেলে আলফু মিয়া ও পরিবারের লোকজনকে। এক পর্যায়ে আলফু মিয়া ও তার ছেলেরা ডাকাতদের শনাক্ত করায় উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে আলফু মিয়া ও তার ছেলে রুবেল, কাইয়ুম, রাইয়ুম, মাছুমকে আহত করে ঘরে রাখা নগদ ৫ লক্ষ টাকা, ৮ ভরি স্বর্ণ ও ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাত দল। সাথে সাথে ডাকাতরা হানা দেয় আলফু মিয়ার ভাই মতিন মিয়ার ঘরে। তার ঘরে থাকা নগদ ২ লাখ ৭০হাজার টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণ ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এ সময় পিছন দিক থেকে বাড়ির লোকজন ডাকাত-ডাকাত বলে চিৎকার করলেও তাদেরকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ডাকাতরা (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩ ৪২৭২) নং নোহা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথে বঙ্গবীর রোডের যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে একটি টেম্পুর সাথে ধাক্কা খেলে গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পালিয়ে যায়। গতকাল সকালে খবর পেয়ে মোগলাবাজার থানা পুলিশ দক্ষিণ সুরমা থানার সহযোগিতায় গাড়িটি উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ গাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্র’সহ কিছু জিনিসপত্রও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।