আওয়ামীলীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে ভবিষ্যতে বিএনপির কোমরে আর এতো জোর থাকবে না -প্রধানমন্ত্রী

28

BC-13-04-15-N_32কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে বিএনপি ৯২ দিন আন্দোলন করলেও আওয়ামী লীগ সরকার এখনও বহাল তবিয়তে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যতে আর বিএনপির কোমরে এতো জোর থাকবে না।
৯২ দিনের আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়ে বিএনপি জঘন্য অপরাধ করেছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি সারা দেশে নাশকতাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল সোমবার (১৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে দুই বিভাগীয় কমিশনার ও কয়েকটি জেলা প্রশাসন অফিসে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সকালে এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
বেলা সোয়া ১২টার দিকে মন্ত্রিসভার কক্ষ থেকে নাটোর, ফেনী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি এবং রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সকালে স্বাগত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দেশ এগিয়ে যেতে শুরু করে। ২০০১ সালে সেই সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরে। সম্ভাবনার দেশকে জঙ্গি-সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করা হয়।
একবার উন্নতি করলে দেশ কীভাবে আবার পিছিয়ে যায়- সে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিল। জঙ্গিবাদ, বাংলাভাই দিয়েছিল তারা। স্বাধীনতা বিরোধীদের দিয়ে সাদারণ মানুষ এবং আওয়ামী লীগের উপর অত্যাচার করেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর‌্যন্ত যে তাণ্ডব হয়েছিল, তা কোনো মানুষ সহ্য করতে পারেনি। এই অসহায়ত্ব থেকে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়।
বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছর এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছর মিলে সাত বছর দেশ অনেক পিছিয়ে যায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্ধকার যুগ কাটিয়ে এখন আলোর পথে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
২০১৩ সালের নির্বাচনের সময় তাণ্ডব চালিয়ে হত্যাযঙ্গের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পর গত এক বছর মানুষ শান্তিতে থাকলেও এক বছর গত ৫ জানুয়ারির পর বিএনপি-জামায়াত ঘোষণা দিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করে দেড়শ’ মানুষ হত্যা করেছে। আমি বলবো এটা মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড।
প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, জনপ্রতিনিধি এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, গত ৩ মাসে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে পারব বলে আশা করি। এতো ক্ষতির পরেও মূল্যস্ফীতি ৬.২ রয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মাঝখানে কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও এখন তা নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ৯২ দিন দলীয় অফিসে বসেছিলেন আওয়ামী লীগে সরকারকে উৎখাত করবেন বলে। অনেক আঘাত, অনেক কষ্ট দিয়েছে সাধারণ মানুষকে। অন্তঃসত্বা মহিলা, ছোট শিশু, বাবার সামনে ছেলেকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা, বাস-ট্রাকের ড্রাইভারকে পুড়িয়ে হত্যা করার মত জঘন্য কর্মকাণ্ড করেছেন উনি।
জানি না তাতে খালেদা জিয়ার কী অর্জন হয়েছে, কিন্তু দেশের মানুষের প্রতিপক্ষ করে মানুষ খুন কোনো রাজনৈতিক নেতা করতে পারে, এটা আমি ভাবতেই পারি না। কারণ রাজনীতি যদি জনগণের স্বার্থে হয়, জনগণের কল্যাণে হয়, তাহলে জনগণকে হত্যা করা কেন, তাদের কী অপরাধ?
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যাহোক কোর্টে স্যালেন্ডার করতে হয়েছে এবং ঘরেও ফিরতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ বহাল তবিয়তে এখনও আছে, এবং দেশের উন্নয়নের কাজের জন্য যে সমস্ত পরিকল্পনা নিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়ন করব। আশা করি ভবিষ্যতে আর কোমরে এতো জোর হবে না, যে আবার এই ধরনের সরকার উৎখাতের চিন্তা করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদী-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারা করেছে, মানুষ খুন যারা করেছে, পুড়িয়ে যারা হত্যা করেছে, প্রত্যেক এলাকায় এলাকায় যারা এই অপরাধী, যারা এই সমস্ত ঘটনার সাথে জড়িত; আমি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্থাকে বলবো প্রত্যেক এলাকায় খুঁজে খুঁজে তাদের বের করতে হবে এবং তাদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় এই ধরনের ক্রিমিনালদের শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন।
সমাপনী ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী গত তিন মাসে দেশে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, প্রত্যেককে মানুষের আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে। যার ফলে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। ভবিষ্যতে যে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি যারা যারা এই ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান।
তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। মানুষের ক্ষতি যেনো করতে না পারে সেকথাও বলেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসন অফিস থেকে কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সমস্যা-সম্ভাবনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
ভিডিও কনফারেন্সকালে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।