সিটি নির্বাচন ॥ কৌশল পাল্টাচ্ছে আওয়ামী লীগ

35

image_8_453_58983_0.gifকাজিরবাজার ডেস্ক :
ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলে পাল্টাচ্ছে নির্বাচনী কৌশল। ঢাকার দুই এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এতোদিন মেয়র পদে একাধিক নেতার আগ্রহকে পাত্তা না দিলেও এবার একক প্রার্থী সমর্থনে উঠেপড়ে লেগেছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তরে আনিসুল হকের পক্ষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার। ঢাকা দক্ষিণেও সাঈদ খোকন এবং হাজী মোহাম্মদ সেলিমের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
নির্দলীয় সরকারের অধীকে বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা হরতাল-অবরোধ দৃশ্যত শিথিল হয়ে যাওয়ার পর সরকার বলছে, বিরোধী জোটের প্রতি জনগণের সমর্থনে নেই বলে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে না জনগণ। এই অবস্থায় দেশের দুই প্রধান নগরে সরকার সমর্থিত প্রার্থী হেরে গেলে সরকারের পক্ষে তা হবে বিব্রতকর। তাই একজোট হয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন ঘোষণার পর ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়। শুরুতে আওয়ামী লীগ ঢাকা দক্ষিণে সাঈদ খোকন ও উত্তরে আনিসুল হককে প্রার্থী সমর্থন দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। তবে স্বতন্ত্র হিসেবে দক্ষিণে হাজী সেলিম ও উত্তরে কামাল মজুমদার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু তাতে তেমন গুরুত্ব দেয়নি আওয়ামী লীগ।
সম্প্রতি সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে পারে এমন আভাস দেয় বিএনপিপন্থি বৃদ্ধিজীবীরা। এ খবরে আওয়ামী লীগ শিবিরেও কৌশল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে- এমনটি ধরে নিয়েই কৌশল ঠিক করছে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। ইতোমধ্যে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্যেস্ঠ নেতাদের নিয়ে একাধিক বৈঠকও করেছেন। বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে একজন প্রার্থীই শেষমেষ ঠিক করা হবে।
বিদ্রোহী নেতাদের বাগে আনতে দলের কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন কামাল মজুমদার। রবিবার তিনি এ ঘোষণা দেন। কামাল মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তাকেই নির্বাচনে সমর্থন দেবো। তার পক্ষেই কাজ করবো। ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী নিয়েও কাজ চলছে। সেখানেও একক প্রার্থী দেয়া হবে। কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না।’
সূত্র জানায়, বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিবৃত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে দলীয় হাইকমান্ড। তারপরেও যদি তারা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে প্রত্যাহার না করে তাহালে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যে ববস্থা নেয়া হয় তাই করা হবে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এতোদিন মেয়র পদে কাউকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন না দিলেও তিনবারের মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন। চট্টগ্রাম ১৪ দলের এক সভায় মেয়র পদে তাকেই সমর্থন দেয় হয়। কিন্তু নির্বাচনে আগ্রহী অন্য নেতারা মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রকাশ্য বিরোধিতায় নামেন। মূলক মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম পরস্পরকে ঠেকাতে নানা চেষ্টা করে আসছিলেন। বিষয়টি বুঝতে পেয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরকে প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। আর মহিউদ্দিন চৌধুরী তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসে নাছিরের পক্ষে ভোট চান। নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে তাকে সচিব করেছেন আ জ ম নাছির। আবদুচ ছালামও বলেছেন, তার ভোটে দাঁড়ানোর আগ্রহ এখন আর নেই।