স্কুলছাত্র সাঈদ অপহরণ ও হত্যা ॥ টাকার জন্যই আমরা তাকে অপহরণ করে হত্যা করি

55

IMG_2401স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর শাহী ঈদগাহ হযরত শাহ মীর (র.) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আবু সাঈদ অপহরণ ও খুনের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রধান করেছে গ্রেফতার হওয়া এয়ারপোর্ট থানার কনস্টেবল এবাদুল। আদালতে সে জবানবন্দিতে জানায়, মূলত টাকার জন্যই তাকে অপহরণ করি আমরা। পরে ধরা পড়ার ভয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে একে একে ৭টি বস্তার ভেতর মুড়িয়ে রাখা হয়। চিনে ফেলার হত্যার পর লাশ গুম করারও পরিকল্পনা করি। গতকাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী-১) মোঃ সাহেদুল করিমের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খুনের দায় স্বীকার হত্যার এমন লোমহর্ষক জবানবন্দি দিয়েছে পুলিশ কনস্টেবল এবাদুল।
গতকাল বিকেলে এবাদুলের জবানবন্দী শেষে গ্রেফতার হওয়া তার অপর সহযোগী র‌্যাবের সোর্স গেদা মিয়া ও জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিবকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। পুলিশ গতকাল দুপুরে ওসমানী হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে নিহত সাঈদের লাশ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করে। পরে তারা তার লাশ গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার খাসিলা গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে, এ ঘটনায় সাঈদের পিতা আব্দুল মতিন বাদী হয়ে গতকাল রবিবার সকালে আটক ৩ জনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, গত বুধবার স্কুল থেকে ফেরার পথে নগরীর দর্জিবন্ধ বসুন্ধরা এলাকার ৭৪ নং বাসার বাসিন্দা মতিন মিয়ার পুত্র সাঈদকে (৯) অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর সাঈদের বাবা ও মামার কাছে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। এরপর সাঈদের বাবা ও মামা কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
সাঈদের মামা জয়নাল আবেদিন জানান, অপহরণকারীরা ৫ লাখ টাকা দাবি করলে আমরা এতো টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই বলে জানাই। পরে তারা ২ লাখ টাকা দিতে বলে এবং টাকা নিয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার শরীফে যেতে বলা হয়। আমরা টাকা নিয়ে সেখানে গেলে ফোন করে আমাদেরকে বাইশটিলা এলাকায় যেতে বলা হয়। সেখানে যাওয়ার পর তারা ফোন করে বলে, আমরা কেন ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েছি। অপহরণকারীরা সাঈদকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দেয়।
পুলিশ সুত্র জানায়, সাঈদের বাবার কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল অপহরণকারী চক্র। দাবিকৃত টাকা না দেওয়া এবং অপহরণকারী চক্রকে চিনে ফেলায় শিশু সাঈদকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আটককৃত পুলিশের কনস্টেবল এবাদুলসহ ৩ জনকে গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য পায় পুলিশ। এদিকে প্রথমে সাঈদ অপহরণ ও হত্যা ঘটনার মূল হোতা এবাদুলকে পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গ্রেফতার করে। পরে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাকি দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ ফয়াজ আহমদ ফয়েজ জানান, আমরা যে মোবাইল ফোন দিয়ে সাঈদের বাবা ও মামার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল, সেই মোবাইল ট্র্যাক করে এটি এয়ারপোর্ট থানার কনস্টেবল এবাদুলের ফোন বলে জানতে পারি। গত শনিবার কাজ আছে বলে তাকে থানায় ডেকে আনা হয়। সেখানে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদকালে সে প্রথমে ঘটনাটি অস্বীকার করে। পরে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং সাঈদকে হত্যার কথা জানায়। তিনি আরো জানান, এবাদুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গত শনিবার রাত ১১টার দিকে নগরীর ঝেরঝেরিপাড়ার সবুজ ৩৭ নং বাসা থেকে সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এবাদুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নগরীর কোর্ট পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকা থেকে র‌্যাবের সোর্স গেদা মিয়াকে এবং বন্দরবাজার থেকে জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিবকে গ্রেফতার করা হয়।
সিলেট সিআইডির পরিদর্শক শামীমুর রশীদ পীর জানান, সাঈদের গলায় একটি রশি পেঁচানো ছিল। রশি পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে।
কনস্টেবল এবাদুরের বরাত দিয়ে এডিসি রহমত উল্যাহ জানান, ‘সে সহ আরো তিনজন এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। এক সময় সাঈদের পরিবারের সাথে তার পরিবার একই বাসায় সাবলেট থাকতো। এই সুবাদে সাঈদের পরিবার ছিল পূর্ব পরিচিত। সাঈদকে অপহরণের পর তার বাসায় আনা হয়। কিন্তু, পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তারা তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। এ অনুযায়ী অপহরণের পরদিন গত বুধবারই তাকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুম করতে ৭টি বস্তার ভেতরে তার লাশ ঢুকানো হয়।’ রহমত উল্যাহ জানান, গতকাল রবিবার সকালে ওসমানী হাসপাতালে শিশু সাঈদের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এরপর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।