টানা অবরোধ ও হরতালে পর্যটক শূন্য জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল ও পান্তুমাই

53

গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কবি গুরু তার কবিতায় লিখেছেন, দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া/ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া/একটি ধানের শিষের উপড়/একটি শিশির বিন্দু।
বাংলাদেশ এক অপার সৌন্দর্যের দেশ, পর্যটনের প্রচুর সম্ভাবনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এ দেশের প্রকৃতি ও প্রত্মে। বিশ্ব কবির সোনার বাংলা নজরুলের এই বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা রূপের যে তার নেইকো শেষ বাংলাদেশ…এ কেবল গান নয়, নয় কবিতা। বাংলাদেশের রূপ বৈচিত্র ও মানুষের সান্নিধ্যে যে একবার এসেছেন তিনিই স্বীকার করেছেন এ সত্য। শীতের ভোরে মিষ্টি নরম রৌদ্রে আকাশ ছুতে চাওয়া উদ্বত লাউয়ের ডগার আকাশ ছোওয়ার যে সৌন্দর্য্য তা আর কোথাও খোজে পাওয়া যাবে না। নদী এবং নদী কেন্দ্রিক মানুষের জীবন যাপন বাংলাদেশকে করেছে অসাধারণ লাবণ্যবতী। সবুজ ধান ক্ষেতে আটকে দেয় পর্যটকের চোখ। অস্ফুট কন্ঠে বলে উঠে ছবির মতো এদেশ। ষর ঋতুর এ দেশে ঋতু ভেদে পাল্টে যায় এর রূপ। একেক সময় একেক রকম তার সৌন্দর্য্য। কোনটি রেখে কোনটি দেখি। গ্রীষ্মের রৌদ্র বাংলার কালবৈশাখী পাল্টে যায় বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টিতে। টই টুম্বর নদী, বিল ফোটায় শত শত শাপলা-শালূক। শরতে শুভ্র সাদা কাশফুল, নদী, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, হেমন্তে সোনালী ধান ক্ষেতে চলে ফসল কাটার উৎসব। নবান্নে হলুদ সর্ষে ক্ষেতে কিশোরীর বাধ ভাঙ্গা আনন্দের হাসির সাথে আর কিছুর কি তুলনা চলে। কোয়াশার চাদর মুড়ো দিয়ে আসে শীত, পিঠা পুলির উৎসবে মেতে উঠে গ্রাম, আর ফুলে ফুলে ঢলে-ঢলে আসে বসন্ত। উদাস দুপুরে কোকিলের ডাক। আর এই চিরায়ত বাংলার সবচেয়ে অন্যতম ও বড় পাওয়া হচ্ছে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক রূপলাবণ্য। এর মধ্যে অন্যতম সিলেটের সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাট উপজেলায় রয়েছে নয়নাভিরাম কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। যার মধ্যে অন্যতম প্রকৃতিকন্যা জাফলং, বিছনাকান্দি, সোয়ামফরেষ্ট রাতারগুল ও পান্তুমাই জলপ্রভাত। স্রষ্টার সৃষ্টির এমনই আরেক চোখ জুড়ানো নিদর্শন পর্যটন কেন্দ্র  জাফলংয়ের পিয়াইন এর মায়াবী ঝর্ণা।
কিন্তু বর্তমান সময়ে ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালের কারনে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের সীমান্ত জনপথ গোয়াইনঘাটের প্রকৃতিকন্য জাফলং, বিছনাকান্দি, সোয়ামফরেষ্ট রাতারগুল ও পান্তুমাই জলপ্রভাত এবং জাফলংয়ের পিয়াইন এর মায়াবী ঝর্ণা। শীত মৌসুমে গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রে গুলোতে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকলেও বর্তমানে পর্যটকের ভরা মৌসুমে এখানে পর্যটকের আগমন নেই বললেই চলে। কিছু সংখ্যক পর্যটক পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসলে ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে তারা অনেকটাই আতংকিত। এ জন্য দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন বেড়াতে আসা পর্যটক সহ অনেকেই। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক শূন্য থাকায় স্থানীয় এলাকার পর্যটক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি এ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত অনেকেই বেকার হয়ে অলস সময় কাটাচ্ছে।
কুমিল্লা থেকে পরিবার নিয়ে রাতারগুলে বেড়াতে আসা পর্যটক সাব্বির আহমেদ জনি জানান টানা অবরোধ ও হরতালের কারনে সকলেই আতঙ্কগ্রস্থ। আমরা আনন্দ ভ্রমণে আসলে ও গাড়ীতে অনেকটা ভীত সন্ত্রস্ত ছিলাম সবাই। এখানে এসে একটু স্বস্তি পেলেও ফেরার চিন্তায় মন থেকে ভীতি যাচ্ছেনা।
বল্লাঘাট পিকনিক সেন্টারের কর্মকর্তা পলাশ আহমেদ জানান এ সময়টা পর্যটকের ভরা মৌসুম থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে পর্যটক ও পর্যটকবাহি গাড়ী আসছেনা। তাই আমাদের ও প্রতিদিনই লোকসানের অঙ্ক কসতে হচ্ছে।
উপজেলার পর্যটন স্পটের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ কালে তারা এ প্রতিনিধিকে জানান প্রতিবছর এ সময়ে প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসে এবং আমাদের ব্যবসাও অনেক জমজমাট থাকে। কিন্তু টানা অবরোধ ও হরতালের কারনে পর্যটক আসতে পারছেনা। পর্যটক না থাকায় আমাদের বেচা কেনা নেই। এখন আমরা প্রতিদিন প্রায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। তাই আমরা আশা করছি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আবারো পর্যটকের পদভারে মূখর হয়ে উঠবে এই পর্যটন কেন্দ্র। সেই সাথে দেশের সার্বিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যও জমজমাট হয়ে উঠবে।