শোকে মুহ্যমান খালেদা জিয়া, গেট থেকে ফিরে গেলেন শেখ হাসিনা

18

22_51283_0কজিরবাজার ডেস্ক :
খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছেলের অকাল মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে থেকে ফিরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেখা না হওয়ার বিষয়টিকে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস জানান, শোকে বিহ্বল খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ মুহূর্তে দেখা হওয়া সম্ভব নয়। খালেদা জিয়া কিছুটা সুস্থ কলে পরে কোনো এক সময় সাক্ষাতের বিষয়ে জানানো হবে। এর আগে ও পরে কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়।
রাত ৮টা ৩৫ মিনিটের দিকে কার্যালয়ের সামনে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো শনিবার দুপুরে মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এজন্য প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে সেখানে যান। কিন্তু তার কার্যালয়ে ঢোকার সুযোগ না পেয়ে সেখানে ২ মিনিট অপেক্ষা করে তিনি ফিরে যান। এ সময় প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশ্যাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যরা বিএনপি চেয়াপারসনের গুলশান কার্যালয়ের কাছে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। সেখান থেকে সাধারণ মানুষজন সরিয়ে দেয়া হয়। এর পর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু গেট খোলা হয়নি এবং বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো নেতাও আসেননি। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক, অভদ্রতা এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। এর আগে গুলশানের কার্যালয়ের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী রওনা দেয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস জানান, ছেলে হারানোর শোকে বিহ্বল খালেদা জিয়াকে চিকিৎসকের পরামর্শে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। সেজন্য এ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়া সম্ভব নয়। কখন দেখা করা যাবে, তা পরে জানানো হবে।
দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার কাছে ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। দুপুর আড়াইটার দিকে ছোট দুই ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরীন সাঈদ ও শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের কক্ষে প্রবেশ করে কোকোর মৃত্যু সংবাদটি জানান। এ সময় খালেদা জিয়া নির্বাক হয়ে ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে কেঁদে ফেলেন, কিন্তু কোনো কথা বলতে পারেননি। এরপর লন্ডন থেকেও টেলিফোনে মৃত্যু সংবাদ পৌঁছে। ছেলে হারানোর শোকে খালেদা জিয়া বেশ কিছুক্ষণ নিজের কক্ষের দরজা বন্ধ করে একান্তে অশ্র“পাত করেন। এ সময় বাইরের কারও সঙ্গে দেখা করেননি তিনি।
২০০৯ সালের মে মাসে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর ধানমন্ডির সুধা সদনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানান এবং দুই নেত্রীর মধ্যে কিছুক্ষণ কথাও হয়। এর পর বেশ কয়েকবার নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তাদের মধ্যে কথা হয়নি। ২০১৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর শোক জানাতে বঙ্গভবনে দুই নেত্রী গিয়েছিলেন। অবশ্য সে সময়ও তাদের মধ্যে কথা হয়নি।