স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট নগরীর বন্দরবাজার কেন্দ্রীক বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র গড়ে উঠেছে। নগরীর ধোপাদিঘীরপার থেকে রংমহল টাওয়ার, কাষ্টঘর, মহাজনপট্টি, জেল রোড, পূর্ব জিন্দাবাজার, জিন্দাবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, করিম উল্লাহ মার্কেটের সামনের পয়েন্ট, লালদিঘীরপাড়সহ বৃহত্তর বন্দরবাজারে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মোবাইল, টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র খোয়াচ্ছেন এই চক্রের হাতে। ছিনতাইকারীদের মধ্যে কেউ কেউ হাতেনাতে গ্রেফতার হলেও কিছু দিন জেল খেটে আবারও ছিনতাই কাজে নেমে পড়ে। এ সব ঘটনায় বাদী না থাকায়, কেউ সাক্ষী হতে চায় না ফলে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে পড়ে।
ছিনতাইকারী চক্রটি ছিনতাইয়ের পাশাপাশি মাদক সেবন ও এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সাথে আলাপকালে জানা যায়, কুখ্যাত ছিনতাইকারী শহিদ এর নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক ছিনতাইকারী বৃহত্তর বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার এলাকায় বিচরন করে। সাধারণত মাদকাসক্ত কিশোরদের ছিনতাইয়ের কাজে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের হাতে ধারালো ছুরিসহ বিভিন্ন অস্ত্র থাকার কারনে অনেকে সাহস করে ছিনতাইয়ে বাঁধা দিতে পারেন না। অনেক সময় সাহস করে বাঁধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা ও ঘটে। ছিনতাইয়ের সময় প্রান হারানোর উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা ঘটে
গত বছরের ৩০ জুলাই। ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে বন্দরবাজারের প্রাণ হারান শিহাব উদ্দিন (২০)। তিনি ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর এলাকার রাউতখাই গ্রামের সুমন আহমদ এর ছেলে। তিনি একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এ ঘটনায় রানা আহমদ নামে এক ছিনতাইকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। জানা যায়, ছিনতাইকারী শহিদ, তার ভাই আল আমিন, ভাতিজা মিজানসহ তাদের নেতৃত্বে বেশ বড় একটি ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। ছিনতাই কাজে তাদের নিজস্ব সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়। এই পুরো ছিনতাইকারীদের গডফাদার শহিদ। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। শহিদ এর নেটওয়ার্কের বাইরে বন্দরবাজারে আরও বেশ কয়েকটি চুরি ও ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। ২০২৪ সালের ২০ফেব্রæয়ারি বন্দরবাজার এলাকায় বেসরকারি একটি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা ছিনতাইয়ের শিকার হন। এদিন ভোরে বন্দরবাজার এলাকার রংমহল টাওয়ারের সামনে এ ঘটনাটি ঘটে। ৩ ছিনতাইকারী ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওই কর্মকর্তার মোবাইল ফোন, নগদ টাকা এবং জরুরি কার্ড ও কাগজপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
৪ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় বন্দরবাজারস্থ লালবাজার থেকে ৬ ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি ছোরা জব্দ করে। তারা হলেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দি চৌধুরীগাঁওয়ের সুমন মিয়া (২৪) ও পারভেজ আহমেদ (২৩) ছড়ারপার এলাকার হৃদয় (১৯), দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তিরাশিগাঁওয়ের বাবুল মিয়া (২০), সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার ভাটিপাড়া গ্রামের রিয়াজুল হক (২০) এবং সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নাঈম (১৮)। কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ ১৫ই নভেম্বর ৪ ছিনতাইকারীকে নগদ ৪৩, ০০০ টাকা এবং ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ২টি ধারালো চাকুসহ গ্রেফতার করে। তারা হলেন, ছিনতাইকারী সাহেদ আহমদ, কামরুল (২৩), মোঃ সাগর (২৬), মনাফ মিয়া (৫৫)। পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে ছিনতাইকৃত নগদ ৪৩, ০০০ টাকা ও ঘটনায় ব্যবহৃত ২টি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।
১১ডিসেম্বর সিলেট নগরীর বন্দরবাজার, জেল রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন- সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার কাটিপুর গ্রামের আবদুল মালিক রুহেল (২৮), সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বোরুরাড়া গ্রামের পারভেজ আহমদ (২৫), সিলেট নগরীর বাগবাড়ি নরসিংটিলার বাবলু আহমদ (২৩) ও বাগবাড়ি সোনার বাংলা আবাসিক এলাকার মো. কয়েছ (৩০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা তিন হাজার টাকা এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। ৯ই ডিসেম্বর কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী সমরকে ১২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ গ্রেফতার করেছে। বন্দরবাজার পেপার পয়েন্টস্থ এপেক্স নামীয় দোকানের সামনে থেকে মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারী সমর সূত্রধর (৩৫) কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বন্দরবাজারে আসা স্কুল শিক্ষিকা রুবিনার ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে মোবাইল খোয়া গেলে তিনি থানায় জিডি করেন। ছিনতাইয়ের এসবের ঘটনায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই এবাদুল্লাহ বলেন, আমরা ইতিমধ্যে প্রায় ৩০/৩৫ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকীদেরও গ্রেফতারের অভিযান চলমান রয়েছে। বৃহত্তম বন্দরবাজারে ছিনতাইয়ের বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি জিয়া উদ্দিন বলেন, আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছি। ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।