স্টাফ রিপোর্টার
নগরীর বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় সাংবাদিক এটিএম তুরাব নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত সিলেট মহানগর পুলিশের সাবেক এডিসি সাদেক কাউসার দস্তগীরের ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে মঙ্গলবার কারাগারে পাঠিয়েছে পিবিআই।
রিমান্ডে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই এর কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন দস্তগীর। তার দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে গুলি ছুঁড়েছেন। রিমান্ডে পিবিআইকে জানান, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তিনি এক কনস্টেবলের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ফোরটি ফাইভ অ্যাঙ্গেলে গুলি ছুঁড়েন। তবে কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়েননি বলে দাবি করেন তিনি। ঘটনার দিন ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখালে গুলি ছোঁড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সাদেক কাউসার। তিনি বলেন, ঘটনার দিন পুলিশের অনেকেই গুলি ছুঁড়েছেন। কিন্তু তুরাব কার গুলিতে মারা গেছেন, বিষয়টি তার জানা নেই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুরসালিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দস্তগীরকে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালত-১-এ হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক আবদুল মোমেন শুনানি শেষে সাদেক কাউসারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ১৯ জুলাই সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। এসময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেনের আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ জাবুর। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম ও উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউছার, উপ-কমিশনার (উত্তর) অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া মামলায় আরো ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
মামলায় আরো যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- এসএমপির কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার (এসি) মিজানুর রহমান, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুর রহমান, এসআই কাজী রিপন আহমদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আফতার হোসেন খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পীযূষ কান্তি দে, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর, শিবলু আহমদ, সেলিম মিয়া, আজহার, ফিরোজ ও উজ্জ্বল।
অপরদিকে ১৭ নভেম্বর রাতে এ মামলার আরেক আসামি পুলিশ কনস্টেবল উজ্জ্বলকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। এ নিয়ে তুরাব হত্যা মামলায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। দুজনই পুলিশ সদস্য। ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শেরপুর থেকে সাদেক কাউসার দস্তগীরকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে সিলেট আদালতে তোলা হয়। তখন তাকে আদালত ভবনে বিক্ষুব্ধ কয়েকজনকে লাথি-ঘুষি মারতে দেখা গেছে। আদালতে নেয়ার পর তুরাব হত্যা মামলায় সাদেক কাউসার দস্তগীরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। সাদেক কাউসার আন্দোলন চলাকালে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি শেরপুরের ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার দিনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ১৯ জুলাই বেলা ২টার দিকে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে বিএনপির মিছিলে পেছন থেকে গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। এ সময় সাদা পোশাকে থাকা মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক কাউসার একজন কনস্টেবলের হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে একের পর এক গুলি ছুঁড়ছেন। ওই সময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর জখম সাংবাদিক তুরাব ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার দেহে ৯৮টি স্পিøন্টার পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ওই সময়ে নিহত তুরাবের ভাই থানায় মামলা করতে গেলে তা নেয়নি পুলিশ।