করোনা ভাইরাসের আঘাত অর্থনীতিতে

20

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) বড় আঘাত হানছে অর্থনীতিতে। বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ২০০৮ সালে শুরু হওয়া বিশ্বমন্দাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এর প্রভাব। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে অন্তত ৫ ট্রিলিয়ন (৫ লাখ কোটি) ডলার হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। মন্দার পর এমন পতন আর দেখা যায়নি। কমছে জ্বালানি তেলের দামও। করোনাভাইরাসের প্রভাব ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে আশা করা হলেও ঘটছে উল্টোটা। করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে ৫৩টি দেশে। বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেয়ার আতঙ্ক শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিসিসিআই) হিসাব মতে এর ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে অন্তত ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য, স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। বলার অপেক্ষা রাখে না, যে অবস্থা চলছে তা দীর্ঘমেয়াদী হলে বাংলাদেশকে এর অনেক বেশি মূল্য দিতে হতে পারে; বিশেষ করে কাঁচামালের অভাবে অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতির অভাবে অনেক নতুন ফ্যাক্টরি চালু করা সম্ভব হবে না।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বে দুই হাজার ৮১১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে দুই হাজার ৭৪৪ জন মারা গেছে চীনের মূল ভূখণ্ডে। সেখানে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার দাঁড়িয়েছে। আশার কথা, কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা দেখতে দেশে যে ৮৪ জনের রক্ত ও লালার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা ও দেশের বাইরে থেকে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে আছে। রাজধানীর একটি সরকারী হাসপাতালকে শুধু করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আসল ভয় দেশের অর্থনীতি তথা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, চীনের করোনাভাইরাস বৈশ্বিক অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এতে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং পর্যটন খাতেও প্রভাব পড়ছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সমিতি (আইএটিএ) জানিয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে করোনাভাইরাসের কারণে এবার ২ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার ক্ষতি হবে। বিমান সংস্থাগুলোর যাত্রী ১৩ শতাংশ কমে যাবে। করোনার কারণে প্রতিদিন ১৩ হাজার ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে। শুধু চীন নয়, ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অর্থনীতির ধাক্কা সামলানো এবং তা কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে বাংলাদেশকে প্রস্তুত ও সচেতন থাকতে হবে। মানবিক বিপর্যয় এড়ানোর জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। দেশের মানুষও সতর্ক ও সচেতন। তবে বিশ্বমন্দায় পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। নিজস্ব সম্পদ বৃদ্ধি, উৎপাদন বাড়ানো এবং কৃচ্ছ্রতা সাধনÑ দুঃসময়ের এসব ভাবনা নিয়েও পরিকল্পনা নিতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলেরই যথাযথ প্রস্তুতিও আবশ্যক।