দ্রæততম সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে হবে

3

 

বছরের প্রথম দিনে সারা দেশের শিশুরা রীতিমতো উৎসবে মাতে। বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নতুন শ্রেণিতে ওঠার আনন্দ পূর্ণতা পায় নতুন বই হাতে পেয়ে। বেশ কিছু বছর ধরে চলে আসছে এই উৎসবের ধারা। বছরের শুরুতে নতুন বই নিয়ে নতুন ক্লাসের শিক্ষাক্রম শুরু হতো আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে।
এবার সম্ভবত সেই ধারায় বড় ধরনের ব্যতিক্রম হচ্ছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মোট ৪০ কোটি বইয়ের মধ্যে ২৫ কোটি বই ছাপার কাজ এখনো শুরুই হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, বই ছাপার কাজ শেষ হতে কয়েক মাস দেরি হতে পারে। মার্চে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস।
রোজা ও ঈদের ছুটি মিলিয়ে এপ্রিলের মাঝামাঝি হয়ে যেতে পারে পুরোদমে ক্লাস শুরু হতে। পরিবর্তিত শিক্ষাক্রমে বাকি সময়ে পাঠ্যসূচি শেষ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ বেশি করে পাঠ দিতে গেলেও শিক্ষার্থীরা তা গ্রহণ করতে পারবে না। ফলে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক শিক্ষাবর্ষে সাধারণত ৭৬ দিনের ছুটি থাকে। এর সঙ্গে দুই দিন করে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ করলে আরো ১০৪ দিন বন্ধ থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই হিসাবে এক বছরে ক্লাস-পরীক্ষা চলে ১৮৫ দিন। আর এই অনুসারেই শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বইয়ের অভাবে তিন মাসের বেশি সময় চলে যাবে পুরোপুরি পাঠদান শুরু করতে।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২টি পাঠ্যবই ছাপার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই কার্যাদেশ ও চুক্তিপত্র শেষে এই সপ্তাহে ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। এই বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। গত ১০ ও ১১ ডিসেম্বর চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে প্রেস মালিকদের সঙ্গে এখনো চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। ফলে এই তিন শ্রেণির বই ছাপার কাজ শুরু হয়নি। আর নবম ও দশম শ্রেণির বইয়ের কার্যাদেশই এখনো দেওয়া হয়নি। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, এ বছর চুক্তির পর বই ছাপার কাজ শেষ করতে সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪০ দিন, যাকে অপর্যাপ্ত বলে মনে করছেন মুদ্রণসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া বাজারে কাগজেরও সংকট রয়েছে।
বছরের প্রথম দিনে বই উৎসবের সেই ধারা একইভাবে ধরে রাখা হয়তো এবার সম্ভব হবে না। আমরা মনে করি, দ্রæততম সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে হবে।