অস্ত্র-গুলি ওয়াকিটকি নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি

3

কাজির বাজার ডেস্ক

বিএনপির মহাসমাবেশের দিন গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন ও শাহজাহানপুর এলাকায় পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বেশ কিছু গুলি ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ২০ দিন হতে চললেও সেই অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। একই দিনে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ওয়াকিটকিতে অভিযান সম্পৃক্ত স্পর্শকাতর কিছু বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে যায়। পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, কেউ একজন উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ওয়াকিটকির বার্তা রেকর্ড করে ছড়িয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার চেষ্টা করেছিল। সেদিনের অভিযানে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট এমন দুটি ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন। এরপরই মাঠে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ১ নভেম্বরে অস্ত্র-গুলির নিরাপত্তা ও ৫ নভেম্বর ওয়াকিটকিতে বার্তা আদান-প্রদানে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা জারি করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান ও কমিশনারের পক্ষে উপপুলিশ কমিশনার অপারেশন স্বাক্ষরিত ভিন্ন ভিন্ন দুটি অফিস আদেশে এসব বিষয়ে সতর্কতা ও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, অবরোধ-হরতালে দায়িত্ব পালন নিয়ে পুলিশ সদস্যদের নিয়মিতই নিজেদের নিরাপত্তা ও সরকারি লজিস্টিক ব্যবহারের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। এগুলো তারই অংশ।
অস্ত্রের নিরাপত্তার বিষয়ে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, কর্তব্য পালনকালে পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সরকারি অস্ত্র-গুলি যানবাহনে এবং লজিস্টিকসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফোর্সদের জানাতে হবে। এসবের বাইরে পুলিশের স্থাপনা, মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্সসহ সব বিশেষায়িত যানবহন যেমন এপিসি, জলকামান ও রেকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিটগুলোয় বিশেষ করে প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন রাখতে হবে। পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালনকালে দলগত ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা করবে না। দায়িত্ব পালনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউনিফর্ম, পুলিশ আইডি কার্ড, রায়ট গিয়ার পরিধান, অস্ত্র-গুলি ও ওয়াকিটকির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
ওয়াকিটকির বিষয়ে আলাদা অফিস আদেশে বলা হয়, ঢাকা মহানগর পুলিশ সদস্যদের সাংগঠনিক ভাবমূর্তি রক্ষায় নিজ কর্মদক্ষতা, পেশাদারি ও দায়িত্ববোধ থেকে সতর্ক অবস্থায় বেতারযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। চিঠিতে ১১টি নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বেতারযন্ত্রে কথোপকথনের সময় পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি সাধ্যমতো এড়িয়ে চলতে হবে। তথ্য আদান-প্রদান করার সময় অন্য কেউ যাতে রেকর্ড করতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। অতি গোপনীয় কোনো সংবাদ বেতারযন্ত্রে দেওয়া যাবে না। ২০ সেকেন্ডের মধ্যে নিজের কথা শেষ করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন আগে ওয়াকিটকিতে বাহিনীর ভেতরের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক কড়াকড়ি চলছে। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সময় যতটা সম্ভব সাউন্ড কমিয়ে দিয়েও শুনতে বলা হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা শটগান, গ্যাসগান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে একটি পিস্তল, দুটি শটগান, একটি চায়নিজ রাইফেল, একটি গ্যাসগানসহ গুলি ও সরকারি অন্যান্য মালপত্র নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পল্টন ও শাহজাহানপুর থানায় দুটি মামলা করা হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দুটির বাদী দুই থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা। এসব মামলায় বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আদালতে দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) মো. ইউসুফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপির নেতা আমিনুল হকসহ গ্রেপ্তার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেন। পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়ে জখম করেন। বলপ্রয়োগ করে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও সরকারি অন্যান্য মালপত্র নিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা অস্ত্র ও গুলি লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।