চলমান অস্থিরতা নিরসন হোক

25

 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে ধ্বংসের মুখে দেশের অর্থনীতি। অবরোধ-হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি কার্যকারিতা হারিয়ে এখন ভীতিকর একটি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। আগে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মানুষের সাড়া পাওয়া যেত। এখন রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে।
চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচি শুধু বাংলাদেশের জন্যই যে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হচ্ছে তা নয়, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছেও নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। যানবাহনে হামলা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, পণ্য পরিবহনে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা দেশের অভ্যন্তরে স্বাভাবিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে না। বাংলাদেশের গত কয়েক বছরের অর্জন মুছে যেতে বসেছে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। শিল্প-কারখানার উৎপাদন কমে গেছে।
বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। ঠিক এমনটিই মনে করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
সংগঠনটির মতে, চলমান রাজনৈতিক সহিংস কর্মকাÐের ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে। গত মঙ্গলবার বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক নেতাদের নিয়ে এক মতবিনিময়সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি বলেছেন, কয়েক বছর ধরে দেশে অত্যন্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করেছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
দেশের ব্যবসায়ী মহল মনে করে রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকাÐের ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে। একই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশের সরবরাহব্যবস্থাকে বিঘিœত করছে, যার প্রভাব পণ্যের উৎপাদন, বাজারমূল্য এবং রপ্তানি ও সেবা খাতের ওপরও পড়ছে। রাজনৈতিক আন্দোলনের ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যাবসায়িক কর্মকাÐ বন্ধ থাকায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের দুশ্চিন্তাও বাড়ছে।
দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এফবিসিসিআই মনে করে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তৈরি পোশাক খাতে সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই সে জন্য খোলামনে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মানুষ কখনো অপরাজনীতির বলি হতে পারে না। দলীয় দাবি আদায়ের জন্য মানুষকে জিম্মি করা যায় না। সন্ত্রাস করে যে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকা যায় না, তারও অনেক ইতিহাস আছে। কাজেই রাজনীতিকে ইতিবাচক পথে আসতে হবে। মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। রাজনীতি কেন দেশের অগ্রযাত্রার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বরং অগ্রযাত্রার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে রাজনৈতিক শক্তি।
যখনই একটু একটু করে স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়েছে বাংলাদেশ, প্রতিবারই হোঁচট খেয়েছে। রাজনীতি যেন উন্নয়নের প্রতিপক্ষ হয়েছে প্রতিবার। অবরোধের আড়ালে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা, সম্পদের সর্বনাশ, অর্থনীতির চাকার শ্লথগতি আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করছে। অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হলে দেশের উন্নয়ন থমকে দাঁড়ায়। কাজেই আজকের অস্থিরতা নিরসন করতে হবে। নিজেদের সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে উদ্যোগী না হলে সামনে সমূহ ক্ষতি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় দেশের মানুষ।