মৌলভীবাজারে রেস্তোরাঁ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা

8

 

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা

মৌলভীবাজার শহরের কুসুমভাগ বড়হাট এলাকার খানদানি রেস্টুরেন্টে তানিম আহমদ (১৪) নামের এক কিশোর কর্মচারীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত জালাল (৪৫) নামের ওই রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা।
রেস্টুরেন্টের কর্মচারী, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে ওই ঘটনাটি ঘটে। রেস্টুরেন্টের অপর কর্মচারী পান দোকানের দায়িত্বে থাকা বদরুল ওরফে মোল্লার (৪০) ছোট ভাই আজিজুলের (১৮) সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে কাঠের টুকরোযুক্ত ঝাড়ু দিয়ে নির্মমভাবে পেটায় বদরুল মোল্লা। তার বেধড়ক পিটুনিতে গুরুতর আহত হয় তানিম।
জানা যায়, কয়েক দিন আগে নিহত তানিম এবং ওই রেস্টুরেন্টের কর্মচারী জালালের মধ্যে কাজের সময় তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় তানিমের হাতে থাকা বেøড দিয়ে জালালের হাতে আঁচড় দেয়। এই ঘটনা মীমাংসা করে দেয়া হলেও ক্ষোভ থেকে যায় জালালের। ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত জালাল পান দোকানির সঙ্গে আঁতাত করে তাকে শায়েস্তা করতে নানা ফন্দি আটে। শনিবার রাতে তারই ইন্ধনে সুযোগ পেয়ে তুচ্ছ ঘটনায় অপর কর্মচারীর নির্মম পেটুনির শিকার হয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তানিম। এ সময় অন্য সহকর্মীরা তার কান্না ও গোঙানোর আওয়াজ পেয়ে খোঁজ নিয়ে এই ঘটনা তার পরিবার ও অন্যদের জানাতে চাইলে বাধা দেয় আজিজুল, কর্মচারী জালাল ও ম্যানেজারসহ অন্যরা। তখন তার অবস্থার অবনতি হলে বাধ্য হয়ে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলারেল হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবারো ওই কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন ম্যানেজার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অন্য কর্মচারীদের সতর্ক করে তানিমের অভিভাবক কিংবা অন্য কাউকে ফোন করতেও নিষেধ করা হয়। পরে তানিমকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তানিমের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে রেস্টেুরেন্টের অন্য কর্মচারীরা পালিয়ে যায়। ওই রেস্টুরেন্টে ১৮ জন কর্মচারীর মধ্যে অধিকাংশই বয়সে কিশোর। ওই ঘটনার বক্তব্য নিতে ম্যানেজার বা মালিকপক্ষ কাউকে মুঠোফোনে বা রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায়নি। নিহত তানিমের বাড়ি জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের রায় পরাণ গ্রামে। তার পিতা মো. মুহিব মিয়া। ৩ ভাই ও বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। অভাব অনটনের সংসার তার আয় রোজগার দিয়েই চলতো বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
কিশোর তানিমকে হারিডে রেস্টুরেন্টের সামনেই বিলাপ করছেন তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। তারা ঘটনায় জড়িত খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বদরুল মোল্লা ও আজিজুলের বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শমসেরগঞ্জ রাউৎগাঁও উত্তর নারায়ণ পাশা। তবে জালালের ঠিকানা তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মশিউর রহমান জানান, জালাল নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।