কৃষি ও কৃষকের প্রতি নজর দিন

4

 

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জালের মতো ছড়িয়ে আছে নদী, বিল, খাল। বর্ষায় নদীবিধৌত পলি ছড়িয়ে পড়ে বিল-ঝিলে, ফসলের মাঠে। সোনার ফসল ফলে দেশে। দেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মুঠো ভরে বীজ ছড়ালে কোনো সাহায্য ছাড়াই ফসলের অঙ্কুরোদ্গম হবে। শস্যের অমিত সম্ভাবনার দেশ। ফসলের এই সমারোহের কারণে বাংলাদেশ ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে চাল, মসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, চায়ের মতো পণ্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফল। গত এক দশকে কুমড়া, ফুলকপি ও সমজাতীয় সবজির মতো কিছু পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) দেশভিত্তিক কৃষিপণ্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে চিত্রটি দেখা যায়। সংস্থাটি গত মার্চে এই পরিসংখ্যান হালনাগাদ করে। এতে তথ্য দেওয়া হয় ২০২১ সালের। বাংলাদেশ আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের ৯৪তম দেশ। তবে এফএওর হিসাবে দেখা যায়, প্রাথমিক কৃষিপণ্য (শুধু ফসল) উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৪তম। শীর্ষে রয়েছে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, আয়তনে ছোট হলেও কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো।
এফএওর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য ছিল ৩ হাজার ৬১১ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার লাখ কোটি টাকার সমান। উৎপাদনের পরিমাণ ৯ কোটি ৩৩ লাখ টন। ভৗগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও ভ‚মির ধরনের কারণে আমাদের দেশে বেশিরভাগ ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। সরকারও কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। নতুন জাত উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। এতে অনেক ফসল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দশে জায়গা করে নেওয়ার মতো ফলাফল আমরা পাচ্ছি। অবশ্য সংরক্ষণের অভাবে আলু, সবজি ও ফলমূল নষ্ট হয়ে যায় উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ জন্য ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
এফএওর হিসাবে, ২০০১ সালে ১১টি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ দশে ছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭টিতে। এরপর বিভিন্ন বছরে যোগ হয় আরও পাঁচটি কৃষিপণ্য-পেঁয়াজ, কুমড়া, ফুলকপি ও ব্রকলি (ফুলকপির মতো সবজি), পাখির খাদ্য (বীজ) এবং অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত শিমের বিচি। এ তালিকায় যেমন একক পণ্য আছে, তেমনি সমজাতীয় ও মৌসুমভিত্তিক কয়েকটি পণ্য মিলিয়ে একটি শ্রেণি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশ কোনো পণ্য উৎপাদনে প্রথম নয়। অল্প জায়গা নিয়ে উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দশে অনেক ফসল স্থান পাওয়া ভালো খবর। তবে একই সঙ্গে একটি কথা বলতেই হয়। যে কৃষক এত অল্প জায়গায় ফসল ফলিয়ে দেশকে উঁচু আসনে বসায়। মানুষের মুখের খাবারে জোগান দেয় তাদের সার, বীজ, কীটনাশক নিয়ে যে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সেটা বন্ধ করা একইভাবে তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা দরকার। কৃষি ও কৃষকের প্রতি নজর দিলে আমাদের কৃষিপণ্য এগিয়ে যাবে বহুদূর।