তাহিরপুরে যুবককে অপহরণ করে হত্যা

7

তাহিরপুর থেকে সংবাদদাতা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শাকিব রহমান নামে এক যুবককে অপহরণের পর বাড়িতে আটকে রেখে চার হাত পা ভেঙে খুন করেছে মোশারফ বাহিনী ওরফে কালা বাহিনী সদস্যরা। মঙ্গলবার ভোররাতে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া কালা বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে আসে।
নিহত শাকিব রহমান উপজেলার উত্তর বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া টেকেরগাঁও গ্রামের মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে।
মঙ্গলবার বিকালে তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে ৮-৯ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওই যুবককে পিটিয়ে চার হাত পা ভেঙে নির্মমভাবে খুন করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামবাসী, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত শাকিব রহমানের পরিবারের লোকজন জানান, সোমবার রাত ১১টার পর পূর্ব বিরোধের জের ধরে গ্রামের প্রভাবশালী মোশারফ হোসেন তালুকদার ওরফে কালা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য গ্রামের চক বাজার থেকে শাকিবকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পর কালা বাহিনী প্রধান মোশারফ হোসেনের বসত বাড়ির গেট বন্ধ করে বসত ঘরের বৈঠকখানার মেঝেতে শাকিবকে ফেলে রেখে তার চার হাত পা বেঁধে রাত ১টা ৩৫ মিনিট থেকে রাত ২টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ১২ থেকে ১৫ জন বাঁশ, কাঠের রোল, লোহার রড, লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে চার হাত পা ভেঙে খুন করে লাশ ফেলে রাখে।
নিহত শাকিবের পিতা মুজিবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ছেলেকে উদ্ধারের জন্য গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে রাতে মোশারফের বাড়িতে গেলে হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যা চেষ্টা চালায় মোশারফ ও তার লালিত সদস্যরা। প্রাণ রক্ষায় ছেলেকে ফেলে পালিয়ে এসে আমি থানা পুলিশকে ফোন করে ছেলে উদ্ধারের আকুতি জানাই রাতেই।
তিনি জানান, শাকিবকে সরাসরি হাত পা বেঁধে মারপিটে অংশ নেন উপজেলার ঘাগটিয়া বাঁশপাড়ার কালা বাহিনী প্রধান মোশারফ হোসেন তালুকদার, তার ছেলে মোনায়েম হোসেন রাজু তালুকদার, মোশারফের সহোদর মোশাহিদ তালুকদার, মোহিনুর তালুকদার, মোশারফের শ্যালক শিবুল, নুরুজ আলী, কাহার, বাহার, রফুসহ কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৬ জন সদস্য।
পূর্ব বিরোধের জের ধরে শাকিব রহমানকে কালা বাহিনীর সদস্যরা গভীর রাতে ঠাÐা মাথায় খুন করার পর নিজেরাই থানা পুলিশকে ফোন করে ‘জজ মিয়া’ নাঠক সাজিয়ে উল্টো শাকিব হত্যাকাÐের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জানায় মোশাররফের বাড়িতে আক্রমণ করতে এসেছে শাকিব ও তার পিতা মুজিবুর রহমান। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শাকিবের অবস্থা আশংকাজনক দেখে তাকে দ্রæত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেয়।
অপরদিকে কালা বাহিনীর লোকজন মুজিবুর রহমানের বসতবাড়িতে হামলা করবে এমন গুজব রটিয়ে মুজিবুর রহমানের গোটা আট পরিবারের সদস্যদের রাতভর বাড়ি ছাড়া করে রাখে যেন শাকিবের মৃত্যুর ঘটনা আড়াল করে রাখা যায়।
পুলিশ ঘটনা জেনে ফেলায় প্রথমে লাশ গুমের চেষ্টা থেকে সরে এসে কয়েকজনকে দিয়ে মোশারফ মৃত জেনেও শাকিবের লাশ চিকিৎসার জন্য রাতে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। সেখানকার চিকিৎসকরা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিলে ভোররাতে সিলেট ওসমানীতে নিয়ে গিয়ে শাকিবের লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে আসে।
নিহত শাকিব হত্যাকাÐ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার ঘাগটিয়া বাঁশপাড়ার কালা বাহিনী প্রধান মোশারফ হোসেনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করা হলে তার ফোন বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এসএসপি) আলী ফরিদ আহমদ জানান, আমি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এটি মূলত অপহরণপূর্বক পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাÐ। যুবককে হাত পা বেঁধে বাড়িতে আটকে রেখে নির্মমভাবে পিটিয়ে ঠাÐা মাথায় হত্যা করেছে খুনি চক্র। আসামিদের গ্রেফতারে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই হত্যাকাÐে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও জানান তিনি।