শ্রীমঙ্গলে জেঁকে বসেছে শীত ॥ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস

9

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
দেশের শীতলতম অঞ্চল হিসেবে পরিচিত চা শিল্পাঞ্চল ও পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে জেঁকে বসেছে শীত। জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি থেকে দেশের বিভিন্ন জেলারমতো এ অঞ্চলের উপর দিয়ে শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ায় হাড় কাঁপানো শীতে জুবুথুবু অবস্থা হয়েছে এ জনপদের ছিন্নমূল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী মানুষের মাঝে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে চলতি শীত মৌসুমের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ইনচার্জ আনিসুর রহমান বলেন, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করাহয় ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই চলতি শীত মৌসুমের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা বলে যোগ করেন তিনি। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বুধবার ছিলো ৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি আরো বলেন, জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি থেকেই এখানকার তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে প্রতিদিনই কমছে। এর আগে চলতি বছরের শীত মৌসুমে শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা ওঠানামা করছিল। জেলা জুড়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। এছাড়া অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী আগামী কয়েকদিন হয়তো আরও কিছু তাপমাত্রা কমবে। এতে শীত আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা বাতাস এবং ঘনকুয়াশা থাকতে পারে। এরপর স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, শৈত্য প্রবাহের কারণে তাপমাত্রা নামার পাশাপাশি কনকনে হিমেল বাতাস বইছে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে। যার ফলে বিকাল থেকে পর দিন সকাল পর্যন্ত কনকনে বাতাস বয়ে যাওয়ায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। এমনটি আরো কয়েক দিন থাকতে পারে এ অঞ্চলে।
এছাড়া জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতিবছরই ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে এখানকার তাপমাত্রা থাকে। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালের ৪ জানুয়ারি, ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি, ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাছাড়া ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে হিম শীতল বাতাসে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে নি¤œ মধ্যবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষদের জীবন। গত কয়েক দিনের তীব্র ঠান্ডা এবং ঘন কুয়াশার কারণে নি¤œ আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ঘনকুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডা বাতাসের কারণে অনেক খেটে খাওয়া মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পাননি। বিশেষ করে চাবাগান গুলোর চা শ্রমিকদের অবস্থা জবুথুবু। অনেকেই খড়কুটো জ¦ালিয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করছেন। তবে সূর্যের তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত অপেক্ষাকৃত কম অনুভূত হচ্ছে। আবার বিকেল থেকেই ক্রমশ তাপ মাত্রা কমতে শুরুকরে। এতে পুরো জেলার চা বাগান গুলোতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দুপুরের আগ পর্যন্ত গাড়ি গুলোকে হেডলাইট জ¦ালিয়ে চলতে দেখা গেছে। বিশেষ কারণ ছাড়া কেউই বাসা-বাড়ি থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। তবে শহরের গরম কাপড়ের দোকান গুলোতে ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
অন্যদিকে শীতকে উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা চায়ের রাজ্যে বেড়াতে আসছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আবাসিক হোটেল/রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট মালিকরা। তবে শীত বাড়ার সাথে সাথে ঠান্ডাজনিত রোগির সংখ্যাও বেড়েছে বলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে। গত কয়েকদিন ধরে বয়স্ক ও শিশুরা স্বর্দি, জ¦র, কাশি নিয়ে সবচেয়ে বেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অপরদিকে প্রতিদিনই পাহাড়ি জনপদের খেটে খাওয়া মানুষ গুলো তীব্র শীত উপেক্ষা করে ঠেলা ও ভ্যানে করে আনারস, লেবু, কলাসহ বিভিন্ন ফলফলাদি নিয়ে কাক ডাকা ভোরে শহরে আসতে দেখা যায় শ্রীমঙ্গল শহরে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মিঠুন বলেন, পুরো উপজেলা জুড়ে সরকারী ভাবে সাড়ে পাঁচ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো ৫শ’ কম্বলের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড় নিজ উদ্যোগে দুইশ’ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আর বেসরকারীভাবে আরো প্রায় আড়াই- তিনহাজার কম্বল শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ জানান, শীতের কারণে রোরো ধানের বীজতলায় চারা বৃদ্ধি বিলম্বিত হয়েছে। শীত ও ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে ধানে চিটা আসতে পারে।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, অন্য সময়ের তুলনায় এখন শীতজনিত রোগে প্রতিদিন জেলার সরকারি ও বে-সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্কদের ভর্তির সংখ্যা অনেক বেশি।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, জেলায় মোট বরাদ্ধ এসেছে ৩৫ হাজার ২৮০ পিস কম্বল। ইতোমধ্যে কম্বলগুলো জেলার ৭টি উপজেলার ছিন্নমূল, দিনমজুর ও অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।