কবিরাজি চিকিৎসা বেহাল

144

 

আধুনিক চিকিৎসাসেবা নিতে অক্ষম দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে এখনো নানা ধরনের টোটকা চিকিৎসাই ভরসা। কিন্তু প্রচলিত সেসব চিকিৎসাপদ্ধতির নামে বেশির ভাগ স্থানেই চলে ব্যাপক প্রতারণা। কবিরাজির নামে এমন অনেকে এসব প্রতারণা করছে, যাদের কবিরাজি সম্পর্কেও কোনো জ্ঞান নেই। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের রাজার বাজারে দুলাল চন্দ্র পাল নামে এক ব্যক্তি নিজেই ওষুধ তৈরি ও বিক্রি করেন। প্রায় সর্বরোগের এই ওষুধ বানানোর পদ্ধতিও বিচিত্র। তিনি বিভিন্ন লতাপাতা সংগ্রহ করে কয়েকটি ড্রামের মধ্যে সেগুলো ভিজিয়ে রাখেন। সেই পচা পানি বোতলে ভরে তিনি বিক্রি করেন। জানা যায়, বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ‘দালাল’ ধরনের কিছু লোক রয়েছে, তারাই রোগী ধরে দুলাল চন্দ্রের কাছে পাঠায়।
কবিরাজি ওষুধেরও কিছু ভিত্তি রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে ভেষজগুণ অনুসন্ধান করে বিভিন্ন ওষুধ তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করেই কেউ কবিরাজি চিকিৎসা করতে পারেন। অথচ দেশের আনাচকানাচে এমন বহু ওষুধ বিক্রেতা পাওয়া যায়, যাদের কবিরাজি ওষুধ সম্পর্কেও কোনো জ্ঞান নেই বললেই চলে। অথচ এরা জীবাণুঘটিত রোগসহ প্রায় সব রোগেরই ওষুধ বিক্রি করে। এর ক্ষতি বহুবিধ। যিনি অসুস্থ, এই ওষুধে তাঁর রোগ সারে না, বরং রোগ আরো খারাপ পর্যায়ে চলে যায়। একসময় রোগটি চিকিৎসার আওতার বাইরে চলে যায় এবং রোগী মারা যান। দ্বিতীয়ত, যে পদ্ধতিতে ওষুধ বানানো হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়ায় এই ‘ওষুধ’ নতুন নতুন রোগ সৃষ্টি করে। যেমন কুমিল্লার সিভিল সার্জনের মতে, লতাপাতা ভেজানো এই পচা পানি খেয়ে পেটের পীড়া, লিভারের অসুখ, হেপাটাইটিসসহ আরো অনেক রোগ হতে পারে। তার পরও দুলাল চন্দ্ররা নিয়মিতভাবে মানুষকে ঠকিয়েই চলেছে।
এ ধরনের অপচিকিৎসা ঠেকাতে হলে আধুনিক চিকিৎসাসেবা সাধারণ মানুষের কাছে আরো সহজলভ্য করতে হবে। ইউনিয়নভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর আধুনিকায়ন ও সেবা সম্প্রসারণ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অভিযোগ আছে, এসব ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায়ই চিকিৎসক থাকেন না। রোগীরা এখানে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। ফলে তাঁরা হাতুড়ে চিকিৎসকদের কাছে যান। এটি রোধ করতে হবে। পাশাপাশি প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।