স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার, ঝুঁকিতে পরিবেশ

14

কাজিরবাজার ডেস্ক :
খালি এলপিজির সিলিন্ডার বাজার থেকে কিনে স্টিল রি-রোলিং মিলগুলোয় কমদামে বিক্রি করে দিচ্ছে একশ্রেণির অসাধু চক্র। এতে বাজারে সিলিন্ডার সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এলপিজি ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি পরিবেশের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে জানান তারা।
জানা যায়, সম্প্রতি একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী স্টিল বা ইস্পাতের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের অবৈধ ব্যবসা শুরু করেছে। তাদের কাছে লাভজনক হয়ে উঠেছে এই কাজ। কিন্তু এতে করে সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করার সময়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি বাজারে দেখা দিচ্ছে সিলিন্ডার সংকট। যার ফলে ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন এই খাতের বিনিয়োগকারীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্ফোরক পরিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। এই ধরনের কাজ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বেশ কিছু অভিযানও আমরা পরিচালনা করেছি। পরিবেশের জন্যও বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমরা সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছি৷
এলপিজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলপিজি সিলিন্ডার একটি অতি সংবেদনশীল পণ্য। এতে উন্নত মানের স্টিল বা ইস্পাত ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এসব সিলিন্ডার। এই সিলিন্ডার উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ে। তাই এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তুকি দিয়ে এসব সিলিন্ডার বাজারজাত করে থাকে। এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য থাকে সাশ্রয়ী দামে গ্রাহকের ঘরে এলপিজি সিলিন্ডার পৌছে দেওয়া। গ্যাস শেষ হয়ে গেলে এগুলো আবার রিফিল করার জন্য এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। তবে, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মাঝখানের এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে।
গত ১২ নভেম্বর এই ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, ওই দিন টাঙ্গাইলের কয়েকটি গাড়িতে করে জি-গ্যাস এলপিজির খালি সিলিন্ডার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পরে দেখা যায়, ওই সিলিন্ডারগুলো রায়পুর থানার লেংরা বাজারে অবস্থিত মেসার্স মানিক আয়রন মার্টের গোডাউন ও আশপাশের কয়েকটি গোডাউনে নামানো হচ্ছে। পরে মেসার্স মানিক আয়রন মার্টের গোডাউনে পুলিশ গিয়ে দেখে, সিলিন্ডারগুলো থেকে ভালব আলাদা করা হচ্ছে। গোডাউনে উপস্থিত মানিক আয়রন মার্টের দায়িত্বশীলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে হলে তিনি ভুল স্বীকার করে নেন এবং ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কাজ করবেন না বলে জানান।
এদিকে জি-গ্যাস এলপিজির চিফ বিজনেস অফিসার আবু সৈয়দ রেজা বলেন, যেকোনও সিলিন্ডারের স্বত্ত্বাধীকারি নির্দিষ্ট অপারেটর। আমাদের প্রায় ২০ লাখ সিলিন্ডার বাজারে আছে। আমরা এই সিলিন্ডারগুলো নির্দিষ্ট ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে বিতরণ করে থাকি। তাদের সঙ্গে শুধু সিলিন্ডার ব্যবহারের চুক্তি করা হয়৷ এরা শুধু আমাদের কাছ থেকে গ্যাস নিয়ে গ্রাহকের কাছে দেবে। এই সিলিন্ডারের কোনও রকম চেঞ্জ বা বিক্রি করতে পারবে না। বিস্ফোরক আইনে এটি দণ্ডনীয় অপরাধ।
তিনি বলেন, আমাদের বেশ কিছু সিলিন্ডার এভাবে পাচার হয়ে যায়। পরে তা আমরা উদ্ধার করি। এই সিলিন্ডারগুলো থেকে ভালব খোলা হচ্ছিল যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে শুধু সিলিন্ডার সংকট নয়, পরিবেশেএ জন্যও এই স্ক্র্যাপ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।
এলপিজি বিক্রয়কারী আরেক প্রতিষ্ঠান ওমেরা এলপিজির এক কর্মকর্তা জানায়, এভাবে খালি সিলিন্ডার নিয়ে গিয়ে স্টিল কারখানায় বিক্রি করে দেওয়ার মাধ্যমে দেশে এলপিজি ব্যবসার ক্ষতি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে খালি সিলিন্ডার বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিকদের আইনের আওতায় আনা দরকার। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দোষীদের ধরতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি
বেক্সিমকোর এলপিজির এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে এলপিজি খাতের ব্যবসা ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর এই খাতকে সমৃদ্ধ করতে হলে অবিলম্বে এর পেছনের অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে হবে।