মেয়াদোত্তীর্ণ ইউপিতেও বসবে প্রশাসক, পদবি বদলাচ্ছে সচিবের

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পৌরসভা ও জেলা পরিষদের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদেও প্রশাসক বসানো যাবে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) আইন সংশোধন করা হচ্ছে। ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) আইন, ২০২২’র খসড়া করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সংশোধিত খসড়া আইন অনুযায়ী, ‘ইউনিয়ন পরিষদ সচিব’র পদবি বদলে হচ্ছে ‘ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা’।
যদি কোনো চেয়ারম্যান বা চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো সদস্য বা প্রশাসক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে খসড়া সংশোধিত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইন সংশোধনে খসড়া চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়েছে। এখন আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা থেকে খসড়া আইন চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মলয় চৌধুরী বলেন, ‘২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন সংশোধনে একটি খসড়া করা হয়েছে। খসড়াটি নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। তবে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এখনও হয়নি। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর আসা মতামত বিবেচনায় নিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। আমরা আশা করছি শিগগির এটি পাঠাতে পারব।’
খসড়ায় কী থাকছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খসড়াটিতে বিভিন্ন পর্যায়ে পরিমার্জন, সংযোজন-বিয়োজন হবে। তাই এতে কী থাকতে তা এখনই বলা ঠিক হবে না।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের পর অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। তাই সময়ের সঙ্গে কিছু কিছু সংশোধন আনা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া ২০০৯ সালের পৌরসভা আইন ও ২০০০ সালের জেলা পরিষদ আইন চলতি বছরই সংশোধন করা হয়।
পৌরসভা ও জেলা পরিষদের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদেও প্রশাসক বসানোর বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত আইনে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের নাম বদলানো হচ্ছে। মূলত বড় এ দুটি পরিবর্তনই আনা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে কেবল নতুন জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকলেও চলমান কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের বিধান নেই।
ওই কর্মকর্তা বলেন, পৌরসভা ও জেলা পরিষদের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদেও প্রশাসক বসানোর বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত আইনে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের নাম বদলানো হচ্ছে। মূলত বড় এ দুটি পরিবর্তনই আনা হচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন আসছে ইউনিয়ন পরিষদ আইনে।
বিদ্যমান আইনে কেবল নতুন জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকলেও চলমান কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের বিধান নেই। সংশোধিত আইনে তা যুক্ত হচ্ছে।
খসড়া সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো এলাকাকে ইউনিয়ন ঘোষণার কিংবা পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর এর কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত কর্মকর্তা বা উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করবে এবং এই আইনের বিধান অনুযায়ী নির্বাচিত পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন।
নিযুক্ত প্রশাসক একবারের বেশি বা ১২০ দিনের বেশি সময় দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। তবে কোনো দৈব-দুর্বিপাকের কারণে এই আইনের বিধান অনুযায়ী নির্বাচিত পরিষদ গঠন করা সম্ভব না হলে সরকার এ মেয়াদ ৬০ দিন পর্যন্ত বাড়াতে পারবে।
অতিমারি, মহামারি বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার ওই মেয়াদ যৌক্তিক সময় পর্যন্ত বাড়াতে পারবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। আগে এ বিধান ছিল না।
খসড়া অনুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের পদবি পরিবর্তন করে ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা করা হচ্ছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শপথ নেওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম সভা হবে। এখন আইনে রয়েছে- চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হতে হবে।
বর্তমান আইনে রয়েছে- দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্যবিধ কোনো কারণে নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে, সরকার লিখিত আদেশ দিয়ে, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত (যা আগে ঘটবে) সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা দিতে পারবে।
সংশোধিত আইনে সেখানে বলা হচ্ছে, দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্যবিধ কোনো কারণে নির্ধারিত পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে, সরকার লিখিত আদেশ দিয়ে, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের কার্যাবলি পরিচালনার জন্য একজন উপযুক্ত কর্মকর্তা বা উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে।
যদি কোনো চেয়ারম্যান বা চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো সদস্য বা প্রশাসক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলেও খসড়া সংশোধিত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালত পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। গ্রাম আদালত পরিচালনার বিষয়টি সংশোধিত আইনে যুক্ত করা হচ্ছে।
ইউনিয়ন পরিষদের বর্জ্য সংগ্রহ, অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার বিষয়টিও সংশোধিত আইনে আনা হচ্ছে, আগে যা ছিল না।